২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এক অনন্য বাতিঘর রাকিবুজ্জামান আহমেদ

সৈকত আবদুর রহিম , প্রকাশিত হয়েছে-

 

এই ক্ষয়ে যাওয়া সময়ে চারদিকে শুধুই ভাঙনের শব্দ। দীর্ঘশ্বাসের চড়া দামে আমরা যখন বিকিয়ে চলেছি আমাদের গৌরব-ঐতিহ্য তখন একজন তরুন মঞ্চে উঠে মাইক্রোফোন হাতে বলে চলেছেন-আসুন সুস্থ সংস্কৃতির চর্চায় জীবনকে দেখি। একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজ বিনির্মাণ করি। মঞ্চের সেই মানুষটি লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ।

 

বিভিন্ন মঞ্চে তাকে দেখা যায় ক্লাসিক গান গেয়ে মাতিয়ে চলেছেন দর্শকদের। নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুদ্ধ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের। এই তরুন তুর্কি ছাত্র জীবনে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ঝুলিতে ভরেছেন অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য অর্জন। অংকের হিসেবে সেই অর্জনের তালিকা বেশ লম্বা।

 

রাকিবুজ্জামান আহমেদের দাদা করিম উদ্দীন আহমেদ ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের ৬ নং সেক্টরের অন্যতম সংগঠক ও ১৯৭০ সালের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এরপর ১৯৭৩ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। করিম উদ্দীন আহমেদ তৎকালীন রংপুর অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের সাথে সাথে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর হাত ধরে ১৯৬৫ সালে তুষভান্ডার রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন স্থানে গড়ে ওঠে কালীঞ্জ ক্লাব। এরপর ১৯৮১ সালে চালু করেন অন্বেষা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। এই সংগঠন দুটির মাধ্যমে তৎকালীন রংপুর অঞ্চলে আয়োজন হত সার্কাস, পালাগান, কুষাণ গানসহ মঞ্চ নাটক। সেই সময়ের যেসব মানুষ এখনো বেঁচে আছেন তাদের মুখে মুখে করিম উদ্দীন আহমেদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বহু কিংবদন্তী শোনা যায়। করিম উদ্দীন আহমেদের বড় ছেলে বর্তমান সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। তিনিও পিতার মতই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রযাত্রায় নির্ভরযোগ্য সারথি।

 

প্রজেেন্মর সেতুবন্ধন হিসেবে দাদা ও পিতার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতায় নিজেকে সামিল রেখেছেন রাকিবুজ্জামান আহমেদ। তিনি কালীগঞ্জ স্পোর্টস ফ্যামিলি ও ঐতিহ্য নামের দুটি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি। কালীগঞ্জ তথা লালমনিরহাটের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী অন্বেষা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বেশ কিছু সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন । তিনি মনে করেন যারা সংস্কৃতির চর্চা করেন তাদের মস্তিষ্ক বিকৃতি হবে না কখনো। তারা অনেক বড় মনের মানুষ। সংস্কৃতিকে গ্রহণ করার যোগ্যতা সবার থাকে না। যারা গ্রহণ করতে পারে তারা মননে-মানসিকতায় অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম।

 

তাঁর চাচা খুরশীদুজ্জামান আহমেদের কাছে ছোটবেলায় নিয়েছেন সংগীতের হাতে খড়ি। গানের পাশাপাশি তবলা, হারমোনিয়াম ও কি-বোর্ড বাজানো শিখেছেন চাচার কাছে। তাঁর এই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বিচরণ ও অর্জনের গুরু মনে করেন চাচা খুরশীদুজ্জামান আহমেদকে। গানের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও মঞ্চে গান গেয়ে মাতিয়ে দেন দর্শকদের। সুবীর নন্দী, মান্না দে, সৈয়দ আবদুল হাদী, নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর গানের ভীষণ অনুরাগী এই তরুণ রাজনীতিবিদ কখনো তারকা খ্যাতির স্বপ্ন দ্যাখেন না। শুধু একটি বসবাসযোগ্য সুস্থ সমাজ বিনির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয়ে আপন মনের খেয়ালে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডসহ সংগীতের চর্চা করেন। লালমনিরহাট অঞ্চলের যে কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। অস্বচ্ছল সংস্কৃতি কর্মীদের দিয়ে থাকেন আর্থিক প্রণোদনা। আজ ২৮ এপ্রিল লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে অন্বেষা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর আয়োজনে সুস্থ সঙ্গীত চর্চায় দুর হোক অপসংস্কৃতি ¯েøাগানে অনুষ্ঠিত হবে রাকিবুজ্জামান আহমেদের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান।

রাজনৈতীক পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাকিবুজ্জামান আহমেদের। নিজেও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন দক্ষতার সাথে। একটি কলেজের প্রভাষক এই তরুন রাজনীতিবিদ জীবনকে উৎযাপন করেন গান গেয়ে, গান শুনে এবং মানুষকে শুদ্ধতার দিকে আহŸান করে। প্রযুক্তির বিশ^ায়নে বর্তমান প্রজন্ম দেশীয় সংস্কৃতির প্রকৃত শেকড় থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের জন্য গহীন অন্ধকারে আলোর রেখার মত কাজ করে যেতে চান এই তরুন। একজন সাধারণ মানুষের মতই তাঁর সংসার আছে। তিনি রাজনীতিবিদ। রয়েছে জীবনের নানা টানাপোড়েন। সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন আধুনিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সংস্কৃতিমনা মানুষ। তাঁর হাতে নিশ্চিন্তে আমাদের প্রজন্মের দায়িত্ব দেওয়া যায়। তাঁর শুদ্ধ সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সব আগাছা উপড়ে গিয়ে নতুনের গানে ভরে উঠবে লালমনিরহাটের মাটি। আজ ২৮ এপ্রিল তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখক- সাবেক কো-চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন বাংলাদেশ।