আমতলী উপজেলায় মেরামত অযোগ্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ২৬টি লোহার সেতু রয়েছে!


হায়াতুজ্জামান মিরাজ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি প্রকাশের সময় : জুন ২৯, ২০২৪, ৯:৪৪ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
আমতলী উপজেলায় মেরামত অযোগ্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ২৬টি লোহার সেতু রয়েছে!

 

বরগুনার আমতলী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে মেরামত অযোগ্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ২৬টি লোহার সেতু চিহ্নিত করছে আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর। ওই সকল সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত ও পারাপার হয়ে আসছে। যে কোনো মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে হলদিয়া হাট সেতু ধসের মত বড় ধরনের কোন হতাহতের ঘটনা।

শনিবার (২২ জুন) বৌভাতে যাওয়ার সময় হলদিয়া হাট সংলগ্ন চাওড়া নদীর উপড় নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ লোহার সেতু ভেঙ্গে মাইক্রোবাস খালে পড়ে ৯ জন মারা যায়। নিহতের মধ্যে দুই শিশু ও একই পরিবারের সাত নারী রয়েছে। এতে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। ওই ঘটঁনার পরে নড়েচরে বসেছে উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর। তারা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ২৬টি লোহার সেতু চিহ্নিত করে সেগুলোতে স্থায়ী বেড়া, সিমেন্টের পিলার বসিয়ে ও সাইনবোর্ড সাটিয়ে মালামাল বহন ও ভারী যানবাহন চলাচলে বিধি-নিষেধ দিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার গুলিশাখালী, কুকুয়া, আঠারগাছিয়া, হলদিয়া, চাওড়া, আমতলী সদর ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন খালের উপড় স্থাণীয় প্রকৌশলী দপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় থেকে নির্মিত লোহার সেতুগুলোর মধ্যে অনেক সেতুতে দেখা দিয়েছে ফাটল। ভীমগুলোতে মরিচা ধরে এ্যাঙ্গেল ক্ষয়ে পড়ে সেতুগুলো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। সেতুগুলোর অনেক জায়গায় উপড়ের ঢালাইয়ের খোয়া উঠে গিয়ে রড বেড়িয়ে গর্তেও সৃষ্টি হয়েছে। দুই পাশের রেলিং ভেঙে খালে পড়ে গেছে। পায়ে হেঁটে গেলেও সেতুগুলো নড়তে থাকে। তারপরেও বিকল্প কোন উপায় না থাকায় প্রায় ২০ বছর আগে নির্মিত, মেরামতের অযোগ্য ওই সকল লোহার সেতু দিয়ে বিভিন্ন গ্রামের স্কুল, কলেজ, মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষজন জীবনের ঝুঁকি ও আতঙ্ক নিয়েই চলাচল করছেন।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্মিত ওই লোহার সেতুগুলো হালকা যান প্রকল্পের আওতায় ২০০২-০৩ অর্থ বছর থেকে ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর থেকেই প্রতিদিন ওই সকল সেতুর উপড় দিয়ে মালামাল বোঝাই করে ভারী যানবাহন, ট্রাক, টাফী (ট্রাক্টর) ও ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক চলাচল করতে থাকে। নিষেধ অমান্য করে ওই সকল সেতুর উপড় দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকায় সেতুগুলো নরবরে ও ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়ে। ঝুঁকিপূর্ন লোহার সেতুর মধ্যথেকে ইতিমধ্যে উপজেলার পশ্চিম গাজীপুর মুসুল্লী বাড়ীর সংলগ্ন, আঠারগাছিয়া বেলায়েত চেয়ারম্যান বাড়ী সংলগ্ন, চাওড়া চন্দ্রা, সদর ইউনিয়নের মেলকার বাড়ী সংলগ্ন, সেকান্দারখালী, হলদিয়ার জেবি সেনের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন, জেন্নাত মিয়ার বাড়ী সংলগ্ন, টেপুরা মল্লিক বাড়ির সামনের সেতুসহ অনেক ঝুঁকিপূর্ন সেতু ধসে পড়েছে। উত্তর-পশ্চিম তক্তাবুনিয়া রাঢ়ী বাড়ীর সামনের সেতুটির একটি অংশ ইতিমধ্যে ডেবে গেছে। সর্বশেষ গত ২২ জনু শনিবার দুপুরে হলদিয়া হাট সংলগ্ন চাওড়া নদীর উপড় নির্মিত ঝুঁকিপূর্ন লোহার সেতু ধসে একটি মাইক্রোবাস পানিতে ডুবে ২ শিশু ও ৭ নারীসহ ৯ জনের প্রানহানির ঘটনাও ঘটেছে। ওই হতাহতের ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন ও প্রকৌশলী বিভাগ আমতলীর ঝুঁকিপূর্ন লোহার সেতুগুলো চিহ্নিত করার কার্যক্রম হাতে নেয়। তার মধ্য থেকে অধিক ঝুঁকিপূর্ন ২৬টি সেতু চিহ্নিত করে সেগুলোর উপড় দিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডি’র পক্ষ থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধের জন্য সর্তকীকরণ সাইন বোর্ড সাটিয়ে দেয়া হয়েছে।

আমতলী উপজেলায় অধিক ঝুঁকিপূর্ন লোহার সেতুর মধ্যে হলদিয়ার টেপুড়া মল্লিক বাড়ী সংলগ্ন, রাঢ়ী বাড়ী সংলগ্ন, আড়পাঙ্গাশিয়ার যুগিয়া,তারিকাটা, আমতলীর আরুয়া বৈরাগী (নাচনাপাড়া), সেকান্দারখালী, আঠারগাছিয়া ইউপি সংলগ্ন, গাজীপুর বন্দর, গুলিশাখালীর খেকুয়ানী বাজার, ফকিরখালী, কুকুয়ার হাজার টাকার বাঁধের ডাপপাশের্^, আজিমপুর বাজার, চাওড়ার চন্দ্রা, লোদাসহ মোট ২৬টি সেতু রয়েছে।

উত্তর-পশ্চিম তক্তাবুনিয়া রাঢ়ী বাড়ী এলাকার মোয়াজ্জেম হোসেন হাওলাদার বলেন, আমাদের বাড়ীর সামনের লোহার সেতুটি নির্মাণের ঠিকাদার ছিলেন হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মৃধা। এই সেতু নির্মাণের কিছু দিন পরেই সেতুর একটি অংশ ডেবে যায়। বর্তমানে সেতুটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে, পায়ে হেটে মানুষ সেতু পার হলেও সেতুটি নরতে থাকে। নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেতুটির বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, একই সময় নির্মাণ করা হলদিয়া হাট সংলগ্ন লোহার সেতুটি ধসে ৯ জন নিহত হয়েছে। কবে জানি আমাদের এই সেতুটিও ধসে পড়ে।

টেপুরা গ্রামের শিক্ষক আলম মল্লিক তাদের বাড়ীর সামনে বিধ্বস্ত অধিক ঝুঁকিপূর্ন লোহার সেতুটি দেখিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোথাও এরকম সেতু আছে বলে আমার জানা নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই সেতু পার হয়ে স্কুল ও মাদরাসার কোমলমতি শিশুরা বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করে। তিনি দ্রæত ওই ঝুঁািকপূর্ণ সেতুসহ উপজেলার সকল লোহার সেতু দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া এবং ভাঙা সেতুগুলো অপসারন ও নতুন করে সেতু নির্মাণের দাবি জানান।

গুলিশাখালীর খেকুয়ানী বাজারের জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, বাজারের লোহার সেতুটি একদিকে কাত হয়ে আছে। যে কোন মুহুর্তে ধসে বড় ধরনের কোন দূর্ঘটনা ঘটে হতাহতের সম্ভাবনা রয়েছে।

হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, দ্রæত সময়ের মধ্যে আমার ইউনিয়নের ওই ১৯টিসহ উপজেলার মেরামত অযোগ্য সকল অধিক ঝুঁকিপূর্ণ লোহার সেতুগুলো সরিয়ে নতুন সেতু নির্মাণ করা না হলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে আরো হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি দ্রæত সময়ের মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো অপসারন ও নতুন করে সেতু নির্মাণের দাবি জানান।

গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডঃ এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, আমার ইউনিয়নে ২৫টির মত লোহার সেতু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে ২টি সেতু অধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তিনি দ্রæত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সেতু অপসারন ও নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানান।

আমতলীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমতলী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে আমাদের দপ্তর থেকে নির্মিত লোহার সেতুর মধ্য থেকে মেরামত অযোগ্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ২৬টি সেতু চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সেতুগুলোতে যাতে যানবাহন চলাচল করতে না পারে সেজন্য স্থায়ী বেড়া, সিমেন্টের পিলার বসিয়ে সর্তকীকরণ সাইনবোর্ড সাটিয়ে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ লোহার সেতুগুলো সরিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে গার্ডার সেতু নির্মাণ করার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, মেরামত অযোগ্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সেতু চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রæততম সময়ের মধ্যে ধসে পড়া হলদিয়া হাট সংলগ্ন লোহার সেতুসহ উপজেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো সরিয়ে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।

 

SK24/SMK/DESK

 


আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০