২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কালীগঞ্জে স্ট্রোকে আক্রান্ত রেজাউল “হিজড়া” হাওয়াই সাহায্যের হাত বাড়ায়নি তেমন কেহ

ফিরোজ আহম্মেদ, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ , প্রকাশিত হয়েছে-
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার ৩ নং জামাল ইউনিয়নের বড় তালিয়ান গ্রামের দবির আলী ও রিজিয়া খাতুন দম্পতির ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে  বড় ছেলে হলো রেজাউল। সে সমাজের তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষ। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আধুনিকতার ছোঁয়া সর্বত্র পৌঁছালেও আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এখনও রয়েছে শ্রেণীবিভাগ বা সামাজিক স্তরবিন্যাস ।তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী আমাদের সমাজেরই সদস্য। তবুও সমাজ তাদেরকে আড় চোখেই দেখে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরকে স্বীকৃতি দিলেও সমাজ ব্যবস্থায় দৃশ্যমান কোনো স্বীকৃতি তাদের দেওয়া হয়না।সমাজে নারী পুরুষ যেসব অধিকার ভোগ করেন, তৃতীয় লিঙ্গের কেউ সেসব অধিকার নিয়ে জীবনযাপন করতে পারেন না। সমাজ তো দূরের কথা পরিবার-পরিজনও তাদেরকে দূরে ঠেলে দেই।কালীগঞ্জে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর নেহাত কম নয়। তাদেরই একজন রেজাউল (৩৭) হিজড়া ।বৃদ্ধ বাবা  মায়ের অভাব অনটনের সংসারে রেজাউল যেনো আলাদা এক বোঝা।এমতাবস্থায় মার্চের প্রথম সপ্তাহে সে হঠাৎ করে স্ট্রোক করে । প্রথমে  কালীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে ও পরবর্তীতে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেই সে। সদর হাসপাতালের ডাক্তার তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাতে নিতে বলেন। তার দ্রুত সেরে ওঠার জন্য উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও পরিবার অর্থাভাবে তা করাতে পারেনি। ফলে হাসপাতাল থেকে ফিরলেও এখনো সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। প্রতিদিন তাকে প্রায় ৩০০  টাকার ঔষধ খেতে হয়। সে ডায়াবেটিস রোগেও আক্রান্ত। রেজাউল হিজড়ার পিতা দবির আলী জানান,আমার ছেলে রেজাউল হিজড়া হওয়ায়  সমাজের কেউ তাকে ভালো চোখে দেখেনা। আমি অত্যন্ত দরিদ্র মানুষ। মসজিদে মোয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে কোন রকম টেনেটুনে সংসার চালায়। এর মধ্যে আবার আমার এই হিজড়া ছেলেটি স্ট্রোক করে।তারপর থেকে আজ অব্দি ধারদেনা করে তার চিকিৎসা চালিয়ে গেলেও এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। ছেলের জন্য অনেক লোকের কাছে হাত পেতেছি, কিন্তু সে হিজড়া হওয়ায় এ পর্যন্ত কেউ সেভাবে কোনো সাড়া দেয়নি।সরকারি ভাবে কোনো সহযোগিতাও সে পায় না। ছেলেটি আমার বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন দবির আলী। এই উপজেলার তৃতীয় লিঙ্গের একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি হলেন ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু। হিজড়া রেজাউলের ব্যাপারে তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি আপনার মাধ্যমে তার ব্যাপারে জানতে পারলাম। তৃতীয় লিঙ্গের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমি আমার জায়গা থেকে খোঁজ নিয়ে সহযোগিতা করব ইনশাল্লাহ। কালীগঞ্জের তৃতীয় লিঙ্গের একটি গ্রুপের সরদার রত্না হিজড়া জানান,রেজাউল  আসমানী হিজড়া গ্রুপের সাথে ছিল। আমি তাকে চিনি। তবে সে যে খুব অসুস্থ এ ব্যাপারে আমি জানতাম না। আমাদের নিজেদেরই চলেনা। যে কারণে সেইভাবে সহযোগিতা করা অসম্ভব হবে না। তবে আমি মনে করি, কালীগঞ্জের বিত্তবান মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা যদি হিজড়া রেজাউলকে এই সমাজেরই একজন মনে করে সহযোগিতার হাত বাড়াই তাহলে তার সুচিকিৎসা করা সম্ভব। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কৌশিক খান জানান,চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা খুব সিমীত ভাবে  আমাদের অফিস থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে। আর হিজড়াদের জন্য ভাতার কার্ড প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তার বয়স হয়নি।কার্ডের জন্য নির্ধারিত বয়স হলে সেটিও করে দিতাম।অসুস্থ রেজাউল হিজড়া সকলের নিকট বাচার আকুতি জানিয়ে বলেন আনাদের সামান্য সহযোগিতায় আমি আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবো। হিজড়া বলে ঘৃণার চোখে দেখেন না। আমাকে কেউ যদি সহযোগিতা করতে চান তাহলে আমার আব্বার বিকাশ নাম্বার
০১৭৬৬ ১৩১২৬৬ (পারসোনাল)  এ পাঠাতে পারেন।আমি মানুষ, আমি বাচতে চাই।