শরীয়তপুরের

ডামুড্যায় মাছ ধরা উৎসবে বাঙালি ঐতিহ্যের জয়গান


কালাম সরদার, শরীয়তপুর প্রতিনিধি প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২০, ২০২৪, ৯:২৬ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
ডামুড্যায় মাছ ধরা উৎসবে বাঙালি ঐতিহ্যের জয়গান

 

শরীয়তপুরের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও মাছ ধরা উৎসবে মেতেছেন শতাধিক জেলে। উৎসব করে মাছ ধরার এমন দৃশ্যের আনন্দ উপভোগ করতে পুকুরের চারপাশে ভিড় করেছেন হাজার হাজার দর্শনার্থী ও ক্রেতা। প্রায় ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে জেলার ফোড়কার পাড় নামক স্থানে এমন মাছ ধরার আয়োজন যেন আরও একবার মনে করিয়ে দেয় আমরা ‘মাছে ভাতে বাঙালি’।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের শুতলকাঠি গ্রামের ফোরকার পাড়ের ঐতিহ্যবাহী পুকুরটিতে মাছ ধরা শুরু করেন জেলেরা। উৎসব করে মাছ ধরার এ আয়োজন চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

স্থানীয় বয়োজেষ্ঠ্য ও মাছ ধরার আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, শুতলকাঠি গ্রামের ফোরকার পাড় নামক স্থানে ঐতিহ্যবাহী পুরোনো একটি বিশাল পুকুর (দিঘি) রয়েছে। অনেকে আগে থেকেই পুকুরটিতে মাছ ধরা উৎসব করা হয়। কিন্তু কে বা কারা প্রথমে এমন আয়োজন শুরু করেছিলেন তা সঠিকভাবে বলতে পাড়ছেন না স্থানীয়রা। তবে বয়োজেষ্ঠ্যদের মতে কমপক্ষে ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে এভাবেই উৎসব করে এই পুকুরে মাছ ধরা হয়।

প্রতি বছরের মতো এবারও পুকুরের ৩২ জন মালিক ও মাছ ধরা আয়োজক কমিটি উৎসবের আয়োজন করেন। মাছ ধরার সময় নির্ধারণ হওয়ার পরে গত কয়েকদিন ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১১১ জন জেলে আয়োজক কমিটির নিয়ম মেনে মাছ ধরার জন্য দুই হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যের টিকেট ক্রয় করেন। এরপর শনিবার সকাল থেকে একযোগে ঝাকি জালের মাধ্যমে মাছ ধরা শুরু করেন তারা।

জেলেদের মাছ ধরা দেখতে পুকুরের চারপাশে ভিড় করেছেন বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৩ হাজার দর্শনার্থী ও ক্রেতা। জেলেদের জালে বড় কোনো মাছ ধরা পড়লেই পুকুরের চারপাশ থেকে এসব দর্শনার্থী ও ক্রেতারা জয়ধ্বনি করে আনন্দ প্রকাশ করছেন। মাছ ধরে বিক্রির এমন উৎসবকে কেন্দ্র করে পুকুরের এক প্রান্তে বসেছে অস্থায়ী মেলা। প্রতি বছর দলবদ্ধ হয়ে মাছ শিকারের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে পুকুর পাড়ে জড়ো হওয়ার পর একযোগে ছন্দের তালে তালে পানিতে নেমে মাছ ধরা যেন বাঙালির ঐতিহ্যের জয়গান।

মাছ ধরা দেখতে আসা সুকান্ত চন্দ্র শীল বলেন, এই ২শত বছরের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক মাছ ধরা দেখতে আসলাম গ্রামীণ সৌন্দর্য খুবই ভালো লেগেছে। সবচেয়ে ভালো লাগছে আপনি যে বাড়ি যাবেন সে বাড়িতেই মাছ খেতে পারবেন। আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই আয়োজন কমিটিকে।

আয়োজন কমিটির সদস্য বিল্লাল হোসেন বলেন, আমরা যেহেতু মাছে ভাতে বাঙালি, পরবর্তী প্রজন্ম মাছ যে জাল ছুরে ধরা যায় এটা অরেকে বুজে না, সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের ফোরকারপাড় ঐতিহ্যবাহী দীঘির এই আয়োজন টা বর্তমান প্রজন্মের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। এবং আমরা চাচ্ছি প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানটা যেন আরো ঝাক জমকপূর্ণভাবে পালন করতে পারি।

তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট দিনে, একটা নির্দিষ্ট টাইমে, একই সময় এই দীঘিতে জাল ফেলা হয়। অনেক লোক দূরদূরান্ত থেকে দেখতে আসেন এবং অনেকে জাল নিয়ে মাছ শিকার করতে আসেন। এটা আমাদের ২শত বছর পুরনো একটা ঐতিহ্য।

কনেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বাচ্চু মাদবর বলেন, ফোড়কার পাড়ের পুকুরটি ২০০ বছরের অধিক পুরোনো। জানতে পেরেছি ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে এভাবেই উৎসব করে মাছ ধরা হয় পুকুরটি থেকে। বাঙালির অবিচ্ছেদ্য বিষয় হলো মাছ। মাছ শিকারের এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজক কমিটিকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

 

SK24/SMK/DESK


আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০