২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আমতলীতে ১১৩০টি গভীর নলকূপ অকেজো,বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট

হায়াতুজ্জামান মিরাজ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি। , প্রকাশিত হয়েছে-

বরগুনার আমতলী উপজেলায় ১১৩০টি গভীর নলকূপ অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষের ডায়েরিয়া ও পেটেরপিড়াসহ অন্যান্য নানা রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে।

আমতলী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে মোট ৩৮৫৪টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এরমধ্যে হলদিয়া ইউনিয়নে ৫৭৮টি নলকূপের মধ্যে ১৬৫টি অকেজো, গুলিশাখালী ইউনিয়নে ৬১১টির মধ্যে ১৭০টি অকেজো, কুকুয়া ইউনিয়নে ৫২৩টির মধ্যে ১৬০টি অকেজো, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নে ৪৬০টির মধ্যে ১৫০টি অকেজো, চাওড়া ইউনিয়নে ৪৪১টির মধ্যে ১৫৫টি অকেজো, আমতলী সদর ইউনিয়নের ৮১৯টির মধ্যে ১৯০টি অকোজো, ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনয়নে ৩৮২টির মধ্যে ১৪০টি অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক নলকূপ অকেজো থাকায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ডোবা নালার দুষিত পানি পান করায় এলাকায় ডায়েরিয়াসহ পেটের নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হলদিয়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অবস্থিত নলকূপটি সংস্কারের অভাবে বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে। উত্তর তক্তাবুনিয়া দাদন শরীফের মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত এবং হলদিয়া গ্রামের নান্নু মীরা বাড়ির নলকুপটি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। মাদরাসা মাঠের নলকুপটি অকেজো থাকায় ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডের মধ্যের গভীর নলকূপ ও পৌরসভার হাজী বাড়ী মসজিদের পাশের নলকূপটি বেশ কয়েক বছর ধরে অকেজো হয়ে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামের শিকদার বাড়ীর কামরুজ্জামান বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরে তাদের বাড়ীর নলকূপটি অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের গৃহবধূ আলেয়া বেগম বলেন, গভীর নলকূপ অকেজো থাকায় এখানকার মানুষ ডোবা, পুকুর নদী নালা থেকে পানি পান করছে। এ সকল দুষিত পানি পান করে অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পরছে।

আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের আমিনুল ফরাজী ও সোনাখালী গ্রামের মোছলেম হাওলাদার বাড়ীর গভীর নলকূপ ২টি ৪ বছর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের আমিনুল ফরাজী বলেন,আমাদের বাড়ীর কাছে নলকূপ অকেজো হওয়ায় অনেক দুরে হেটে গিয়ে খাবার পানি আনতে হয়। একই গ্রামের মোছলেম হাওলাদার বলেন, বিশুদ্ধ পানির অভাবে গরমের সময় মোগো গ্রামে বিভিন্ন রোগ বালাই বাইরা গেছে। গত এক সপ্তাহে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তত শতাধিক ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া গরমের এই মৌসুমে প্রতিদিন শত-শত নারী, পুরুষ ও শিশুরা ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আমতলী হাসপাতালে না এসে ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক এবং গ্রাম্য ডাক্তারদের শরনাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আমতলী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, সদর ইউনিয়নের এখনো অন্তত ৫ হাজার গভীর নলকুপের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা থাকা সত্তে¡ও বরাদ্দ না থাকায় গভীর নলকূপ দেওয়া যাচ্ছে না।

হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, উপজেলার মধ্যে হলদিয়া ইউনিয়ন সবচেয়ে বড় এবং জনস্যখ্যাও অনেক বেশী। চাহিদা অনুযায়ী মানুষ গভীর নলকূপ পাচ্ছে না।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ আবদুল মুনয়েম সাদ জানান, মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানিতে লবনাক্ত বেড়ে যাওয়া, প্রচন্ড গরম এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়েরিয়াসহ অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া দুষিত পানি পান করায় আমাশয় ও জন্ডিসসহ নানা পেটের পিড়া দেখা দিতে পারে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ১৩৭০টি গভীর নলকূপ অকেজো রয়েছে। জনসাধারণের চাহিদা বিবেচনা করে ও সুপেয় পানি পানের কথা বিবেচনা করে আমতলীতে অধিক সংখ্যক গভীর নলকূপ বসানো প্রয়োজন।