১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বহমান শীতলক্ষ্যায় হাসছে লাল স্ট্রবেরি

নিউজ ডেস্ক , প্রকাশিত হয়েছে-

 

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলার শীতলক্ষ্যার তীরে জেগে ওঠা চরে লাল স্ট্রবেরির বাম্পার ফলন হয়েছে। সুগন্ধিযুক্ত টক ও মিষ্টি স্বাদের বিদেশি স্ট্রবেরি শীতপ্রধান দেশের ফল হলেও প্রান্তিক কৃষকের কল্যাণে এখন বাংলাদেশেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। বাজার চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় প্রতিনিয়ত গাজীপুরের কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে এই ফলের চাষ।

জানা যায়, গন্ধ, বর্ণ ও স্বাদে আকর্ষণীয় স্ট্রবেরি ফলের রস, জ্যাম, আইসক্রিম, মিল্কশেকসহ অনেক খাদ্য তৈরিতে স্ট্রবেরির সুগন্ধ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ১৭৪০ সালে ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলে সর্বপ্রথম স্ট্রবেরির চাষ করা হয়। পরবর্তী কালে চিলি, আর্জেন্টিনাসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে স্ট্রবেরি। শীতপ্রধান দেশের ফল স্ট্রবেরি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি পড়ে, সেসব এলাকায় বিভিন্ন জাতের স্ট্রবেরির চাষ হচ্ছে। অনেকে শখ করে বাসা-বাড়ির টবে বা ছাদ কৃষিতে চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে এই ফলের চাষ শুরু করেছেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার কয়েকজন কৃষক।

শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের কাপাসিয়ার সিংহশ্রী ইউনিয়নের একটি গ্রাম কুড়িয়াদী। এই গ্রামের গুটিকয়েক কৃষক নদীর তীরে জেগে ওঠা চরে শীতকালীন ফসলের চাষ করলেও বছরের অন্যান্য সময় ওই জমি পতিত থাকে। কৃষিকাজে ভিন্নতা আনতে চলতি মৌসুমে পাশের শ্রীপুর উপজেলার মৌমিতা ফ্লাওয়ার্সের মালিক দেলোয়ার হোসেনের পরামর্শে গ্রামের কয়েকজন কৃষক স্ট্রবেরির চাষ শুরু করেন, এদেরই একজন তোফায়েল আহমেদ বিদ্যুৎ।

তোফায়েল আহমেদ বিদ্যুৎ জানান, বর্ষায় জমিগুলো পানিতে ডুবে যায় এবং বর্ষা শেষে নদীর পানি নেমে যায়। এতে পলিমাটি জমে কৃষি জমিগুলো বেশ উর্বর হয়ে থাকে। এতে যেকোনো ফসলের চাষ করা হলেই ফলন ভালো পাওয়া যায়। তিনি দেলোয়ারের মালিকানাধীন মৌমিতা ফ্লাওয়ারস থেকে ১ হাজার স্ট্রবেরির চারা কেনেন, প্রতিটি চারার দাম ছিল ৩০ টাকা করে। কয়েকমাস পরিচর্যা করার পর এখন ফল পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিকেজি স্ট্রবেরি তিনি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এপর্যন্ত তিনি দেড় লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন।

তার পাশাপাশি নদীর চরে স্ট্রবেরির চাষ করেছেন একই এলাকার আব্দুর রাজ্জাক প্রধান কাজী। তিনি রোপণ করেছেন ৭ হাজার স্ট্রবেরির চারা। এ ছাড়াও, হুমায়ুন কবির জাপানি নামের এক যুবক রোপণ করেছেন ১৩ হাজার স্ট্রবেরির চারা।

কাপাসিয়ার কুড়িয়াদী গ্রামের চাষি হুমায়ুন কবির জাপানি জানান, অনেকেই অনেকভাবে টাকা পয়সা নষ্ট করে থাকেন। গত মৌসুমের পেঁপের বাগান শীলাবৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ায় অনেক লোকসানের মুখোমুখি হয়েছিলাম। তাই এবার আমরা কয়েকজন মিলে একটি ঝুঁকি নিয়েছিলাম স্ট্রবেরি চাষে। নদীর তীরে আমরা স্ট্রবেরি চাষে ভালো ফলন পেয়েছি। এখন আমাদের দেখাদেখি আগামী মৌসুমে অনেকেই এই ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। লাভজনক চাষ বিধায় নদীর তীরে সম্ভাবনাময় স্ট্রবেরি চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে আগামীতে।

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, স্ট্রবেরিতে উচ্চমাত্রায় পুষ্টিমান বিদ্যমান। এই ফল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রোগমুক্তিতেও সহায়তা করে। গাজীপুরে বিক্ষিপ্তভাবে স্ট্রবেরির চাষ হলেও আমরা এর পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারিনি। অনেকে শখের বশে বাসা-বাড়িতে স্ট্রবেরির চাষ করলেও কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে জেগে ওঠা চরে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ করছেন। আগামীতে এই ফল চাষ আরও বাড়বে।