২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

তাহিরপুরে চাঁদাবাজীতে বাঁধা দেয়ায় ইউপি সদস্য কে মারদর: প্রধান আসামি গ্রেফতার

তাহিরপু র(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ , প্রকাশিত হয়েছে-

 

 

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় সীমান্ত নদী জাদুকাটা নদীর তীরে কেটে ও অবৈধভাবে কোয়ারীর করে বালু-পাথর উত্তোলন সহ নদীতে থেকে বালু পাথর উত্তোলনরত বারকী নৌকা থেকে চাঁদা নিতে বাঁধা দেয়ায় ওই চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা মোশাহিদ হোসেন-রানু (৪৪) নামের এক ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় ঘাগটিয়া টেকেরগাঁও গ্রামের চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী গ্রুপের গডফাদার নুরুজ আলী(৫৫) তার ছেলে কাহার মিয়(২৫) ও বাহার মিয়া (২২) ৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৮/১০ জনকে অজ্ঞাত রেখে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন আহত ইউপি সদস্য মোশাহিদ হোসেন রানু। আজ (৫ এপ্রিল মঙ্গলবার) দুপুরে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। মামলা দায়েরের পর মঙ্গলবার রাতেই তাহিরপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘাগটিয়া বড়টেক গ্রাম থেকে প্রধান আসামি ওই গ্রুপের গডফাদার নুরুজ আলী কে গ্রেফতার করেছে। পরে বুধবার সকালে গ্রেফতার দেখিয়ে সুনামগঞ্জ জেল হাজতে প্রেরণ করে। আহত উত্তর বাদাঘাট ইউনিয়নের ৬ ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত সদস্য (মেম্বার) ও ঘাগটিয়া গ্রামের মৃত এখলাছ মিয়া ছেলে।

থানায় লিখিত অভিযোগ ও আহত ইউপি সদস্য রানু সূত্রে জানাযায়, গত ২ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে বাদাঘাট ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য ( মেম্বার) পদে লড়েন মোশাহিদ হোসেন রানু। নির্বাচনে চাঁদাবাজ চক্রের গডফাদার নুরুজ আলীর নেতৃত্বে ওই চাঁদাবাজ গ্রুপটি রানু’র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক মেম্বার মনির উদ্দিনের সমর্থনে নির্বাচন করে। নির্বাচনে ইউপি সদস্য পদে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ন মোশাহিদ হোসেন রানু। ওই নির্বাচনের জের ধরে চাঁদাবাজ চক্রের গডফাদার নুরুজ আলী সহ ওই গ্রুপটি শত্রুতা পোষণ করে আসছে ইউপি সদস্য রানুর সাথে। পরে ৪ এপ্রিল সোমবার ঘটনার দিন সকালে ঘাগটিয়া এলাকায় জাদুকাটা নদীর আদর্শ গ্রাম সরকারি পুকুর পাড় এলাকায় চাঁদাবাজ চক্রের গডফাদার ঘাগটিয়া গ্রামের নুরুজ আলী, কাহার মিয়, বাহার মিয়া সহ ১০/১২ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ জাদুকাটা নদীতে কাজ করতে আসা বারকী নৌকা শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতি বারকী নৌকা থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করছে। এমন সংবাদ পেয়ে ইউপি সদস্য রানু স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যম ব্যক্তিকে নিয়ে সরকারি পুকুর পাড় জাদুকাটা নদীতে গিয়ে বারকী নৌকার শ্রমিকদের তাদের চাঁদা দিতে নিষেধ করে। এবং নুরুজ আলী তার ছেলে কাহার মিয়া ও বাহার মিয়া সহ চাঁদাবাজ গ্রুপকে চাঁদা নিতে বাঁধা দেয়। এ সময় ইউপি সদস্য রানু চাঁদাবাজদের আর কোন দিন চাঁদা তুলতে নদীর পাড়ে আসলে তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দিলে এসময় ইউপি সদস্য রানুর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে দেখে নিবে বলে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজ নুরুজ আলী তার সঙ্গীদেরকে নিয়ে নদী থেকে চলে যায়। এরই জের ধরে ওই দিন (৪ এপ্রিল সোমবার) বিকাল সাড়ে ৫ টার সময় ঘাগটিয়া চকবাজার থেকে ইফতার নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে ঘাগটিয়া কবরস্থান এলাকায় যাওয়া মাত্রই পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা নুরুজ আলী, তার ছেলে কাহার মিয়া ও বাহার মিয়া সহ ১০/১২ জনের ওই সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ইউপি সদস্য রানুর উপর হামলা চালায়। এ সময় কোনোকিছু বোঝে উঠার আগেই ওই চাঁদাবাজ চক্রটি দা দিয়ে ইউপি সদস্য রানুর মাথায় কুপিয়ে ও লোহার রড ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত গুরুতর আহত করে ফেলে রেখে চলে যায়। এ সময় আহত ইউপি সদস্য রানুর ডাক চিৎকারে স্থানীয় এলাকাবাসী ও তার পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় রানু কে উদ্ধার করে রাতেই তাহিরপুর উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তী করে। আহত ইউপি সদস্য রানু তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে ৫ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ভর্তী হয়। বর্তমানে গুরুতর আহত ইউপি সদস্য মোশাহিদ হোসেন রানু সিলেট উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে।

তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় ইউপি সদস্য নিজেই বাদী হয়ে মঙ্গলবার বিকালে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর রাতেই অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি নুরুজ আলী কে আটক করে পুলিশ। এবং অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখঃ এর আগেও ওই বালু-পাথর খেকো সিন্ডিকেট চাঁদাবাজ গ্রুপটি বিগত বছর ২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ইং সালে ঘাগটিয়া এলাকায় জাদুকাটা নদীর তীর কেটে ও তীর সংলগ্ন জমিতে অবৈভাবে কোয়ারীকরে বালু-পাথর উত্তোলনের ছবি তুলতে গেলে দৈনিক সংবাদ ও দৈনিক শুভ প্রতিদিনের তাহিরপুর প্রতিনিধি ও তাহিরপুর প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি কামাল হোসেন রাফি কে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাত্ন করে।