১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

রমজানে রোজা রাখতে অসুস্থ ব্যক্তিরা যা করবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক , প্রকাশিত হয়েছে-

 

পবিত্র মাহে রমজানে রোজা রাখার জন্য শারিরীক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। অসুস্থরাও রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ করছেন। কিন্তু যারা বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে ভুগছেন তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখা উচিত। তাহলে রোজার মাসে জটিলতা এড়ানো সম্ভব। তবে দীর্ঘদিন ধরে যারা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন তারাও রোজার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারেন। বিশেষ করে ডায়াবেটি, হৃদরোগ, কিডনি রোগ এবং গর্ভাবস্থায়ও রোখা রাখা সম্ভব। এজন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মানতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন

অনেকেই মনে করেন ডায়াবেটিস হলে রোজা রাখা কঠিন। ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখলে অসুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু এই কথার ভিত্তি নেই। ডায়াবেটিস রোগীরাও রোজা রাখতে পারবেন।

চিকিৎসকদের মতে ডায়াবেটিস রোগীরাও রোজা রাখতে পারবেন। তবে তাদের বিশেষ সতর্কতা আর নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।

এখন থেকেই সকাল বা দুপুরের ওষুধ রাতে এবং রাতের ওষুধ সেহরির সময় খাওয়ার অভ্যাস শুরু করতে পারেন। অর্থাৎ যারা মুখে খাওয়ার ওষুধ খান, তারা সকালের ডোজটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের ডোজটি অর্ধেক পরিমাণে সেহরির আধা ঘণ্টা আগে খাবেন।

যারা দিনে একবেলা ওষুধ খান, তারা ইফতারের আগে একটু কম করে খাবেন। ইনসুলিনের ক্ষেত্রেও সকালের ডোজটি ইফতারের আগে, রাতের ডোজটি কিছুটা কমিয়ে সেহরির আধা ঘণ্টা আগে সমন্বয় করে নেবেন। কতটা কমাবেন, তা চিকিৎসক বলে দেবেন। দীর্ঘমেয়াদে কাজ করে এ রকম কিছু ইনসুলিন এখন পাওয়া যায়। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে এসব ইনসুলিন দিনে একবার নিতে পারেন। এসবে হঠাৎ সুগার কমে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

হৃদরোগীরা যেভাবে রোজা থাকবেন

জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া সবাই রোজা রাখতে পারবেন। রোজা রাখলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে এক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ মানতে হবে।

বয়োবৃদ্ধ হৃদরোগীদের রোজা না রাখাই উত্তম। বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব হার্টের রোগী, যারা বেশি দুর্বল, তারা দীর্ঘ সময় অনাহারে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন বলে তাদের রোজা রাখা অনুচিত। পাশাপাশি হার্ট ফেইলিওর রোগীদের রোজা রাখা উচিত নয়।

আনকন্ট্রোল্ড অ্যানজাইনা বা নিয়মিত বুকের ব্যথা থাকে যাদের, তাদের তিন বেলা ওষুধ খেতে হয় বলে রোজা না রাখাই উচিত।

কিডনি রোগীরা যে নিয়মে রোজা রাখবেন

কিডনি রোগে আক্রান্তরাও রোজা রাখতে পারবেন। তবে আকস্মিক কিডনি বিকল রোগে আক্রান্তরা এবং এন্ড স্টেজ রেনাল ফেইলিওর বা শেষ স্তরের কিডনি রোগীদের রোজা রাখা উচিত নয়। বরং রোগ নিরাময় হওয়ার পর রোজা রাখা যাবে।

ডায়ালাইসিস গ্রহণকারী রোগীদের রোজা রাখার প্রয়োজন নেই।

শ্বাসকষ্টের রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন

রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। তবে রোজা রাখা অবস্থায় ইনহেলার নেওয়া যাবে কিনা, এ বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেননা ওষুধ সরাসরি রক্তে মিশে গেলে রোজা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে সঠিক নিয়মে ইনহেলার নিলে রক্তে ওষুধ মিশতে পারে না বা নগণ্য পরিমাণ মিশতে পারে। এ জন্য সেহরি ও ইফতারের সময় ইনহেলার নিলে ভালো হয়। হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট হলে দেরি না করে চিকিৎসা দিতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীরা যেভাবে রোজ রাখবেন

রোজার সময় কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেশি হয়। এর কারণ- পানিশূন্যতা ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া। এ জন্য বেশি করে শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। বিশেষ করে ইফতারের সময় বা পরবর্তী সময় ইসবগুলের ভুসি, লাল আটা ও ঢেঁকিছাঁটা চাল খেতে পারলে ভালো উপকার মেলে। এর পরও সমস্যা থাকলে ল্যাক্সাটিভ ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় যেভাবে রোজা রাখবেন

গর্ভাবস্থায়ও রোজা রাখা যায়। তবে প্রথমে তিন মাসে কখনোই নয়। কেননা, ওই সময় মায়ের গর্ভে অনাগত শিশুর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হয় বলে এ সময় মায়ের শরীরে সঠিক মাত্রায় ও নির্দিষ্ট পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও পানি ইত্যাদি সরবরাহ করা জরুরি। এছাড়াও গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসেও রোজা না রাখাই ভালো। এই দুই সময় ছাড়া রোজা রাখা যাবে।

গর্ভকালীন মধ্যবর্তী তিন মাসে গর্ভবতী মায়েরা একটু ভালো বোধ করেন এবং এ সময় গর্ভস্থ বাচ্চার শারীরিক গঠনও তৈরি হয়ে যায়। এ সময় গর্ভবতী মা ইচ্ছা করলে রোজা রাখতে পারেন, যদি অন্য কোনো সমস্যা না থাকে।

শেষের তিন মাস একজন গর্ভবতীকে বেশ সতর্ক হয়ে চলতে হয়। এ সময় বাচ্চা দ্রুত বাড়ে। তাই দুইজনের পুষ্টি নিশ্চিত করতে গর্ভবতীকে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে জোর দিতে হয়। তাই এ সময় রোজা না রাখাই শ্রেয়।

গর্ভাবস্থায় যারা রোজা রাখবেন তারা ইফতার ও সেহেরিতে ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলবেন। খাবেন পুষ্টিকর খাবার। খেতে পারেন, ফল, সবজি, মাছ, মাংস এবং বিভিন্ন ধরনের শক্তিবর্ধক পানীয়।