শরণখোলার লোকালয়ে বাঘ আতংকে গ্রাম পুলিশের রাতের পাহারা বন্ধ


শেখ মোহাম্মদ আলী প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১১, ২০২২, ৩:২৫ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
শরণখোলার লোকালয়ে বাঘ আতংকে গ্রাম পুলিশের রাতের পাহারা বন্ধ

সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলার লোকালয়ে বাঘ আতংক বিরাজ করছে। বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েছে মহিষ। বাঘের ভয়ে গ্রাম পুলিশ রাতের পাহারা দিচ্ছেননা। সন্ধ্যা হলেই গ্রামের দোকান বন্ধ করে ঘরে ফিরছে দোকানীরা। এমন অবস্থা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর, উত্তর রাজাপুর ও ধানসাগর গ্রামসহ আশেপাশের এলাকায়। বনের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভোলা নদী ভরাট হয়ে সরু খালে পরিণত হওয়ায় বাঘ অবাধে লোকালয়ে প্রবেশ করছে।

শনিবার তথ্য সংগ্রহে সরেজমিনে উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর, উত্তর রাজাপুর ও ধানসাগর গ্রামে গেলে গ্রামবাসী বাঘ আতংকের কথা জানান। দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন তালুকদার, জুয়েল হোসেন, জাহিদুল হাওলাদার, উত্তর রাজাপুর গ্রামের মাসুম হাওলাদার, ধানসাগর টগড়াবাড়ী এলাকার সাইদুর রহমান শেখ, শহিদুল হাওলাদার বলেন, লোকালয় সংলগ্ন পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ষ্টেশন এলাকার বনে বাঘ ও বণ্য শুকরের উপদ্রব বেড়েছে। সন্ধ্যা হলে বনের ছোট খালের পাড়ে বাঘ ক্রমাগত হুকার ছাড়ে। ভোলা নদী ভরাট হয়ে ছোট খালে পরিণত হওয়ায় সহজেই মাঝে মাঝে বাঘ গ্রামে চলে আসে। ৩১ মার্চ দুপুরে দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের সোবাহান হাওলাদারের একটি মহিষ খালের চরে ঘাস খাওয়ার সময় দাসেরভারানী ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ির বন থেকে এসে একটি বাঘ মহিষটিকে আক্রমণ করে। বাঘের কামড়ে গুরুতর জখম মহিষটির ডাক চিৎকারে গ্রামবাসী এগিয়ে গেলে বাঘ খাল সাতরে দ্রæত বনের মধ্যে চলে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী দেলোয়ার হোসেন তালুকদার জানিয়েছেন। এর আগে ২৫ মার্চ রাতে সুন্দরবনের নাংলী এলাকা থেকে বাঘ উত্তর রাজাপুর গ্রামের জলিল মাষ্টারের বাড়ীর আঙ্গিনায় ঢোকে। সকালে ঐ বাড়ীর পুকুর পাড়ে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায় বলে মাসুম হাওলাদার জানান। সপ্তাহখানেক পূর্বে মধ্য রাতে ধানসাগর ওয়ার্ড গ্রাম পুলিশ তোফাজ্জেল হোসেনের বাড়ীর সামনে রাস্তার উপর একটি বাঘ এসে হুংকার ছাড়ে এ ঘটনায় গ্রামে ব্যপক আতংক ছড়িয়েছে বলে ঐ গ্রাম পুলিশ জানান। ৩নং রায়েন্দা ইউনিয়নের ১নং দক্ষিণ রাজাপুর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ শহিদুল ইসলাম ও ১নং ধানসাগর ইউনিয়নের ধানসাগর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, লোকালয়ের কাছে বাঘের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা আতংকে রাতের বেলা গ্রামে পাহারায় বের হতে হিমসিম খাই এবং লোকজন নিয়ে সর্তকতায় চলাফেরা করি বলে জানালেন গ্রাম পুলিশদ্বয়। ধানসাগর টগড়াবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সোমা তালুকদার বলেন, সন্ধ্যা নামলে আমরা বাঘ আতংকে থাক্ িঘর থেকে কেউ বের হয়না।
দাসেরভারাণী ফরেষ্ট টহল ফাঁিড়র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ৩১ মার্চ বন থেকে বাঘ এসে দক্ষিণ রাজাপুরে মহিষ আক্রমণের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
ধানসাগর টগড়াবাড়ী এলাকার রাস্তার পাশের ছোট দোকানী আমিন চৌকিদার বলেন, সন্ধ্যা হলেই বাঘ আসার আশংকায় দোকান বন্ধ করে বাড়ী চলে যাই এবং লোকজন বাইরে চলাফেরা বন্ধ করে দেয় এ ছাড়া রাতের আধারে বণ্য শুকর দলবেধে গ্রামে ঢুকে ফসল নষ্ট করে থাকে বলে ঐ দোকানী জানান।

ধানসাগর ইউপি চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম টিপু বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর ও ধানসাগর গ্রামে বাঘের আনাগোনার খবর তিনি শুনেছেন এবং ঐ এলাকার মানুষ সর্বদা বাঘ আতংকে থাকেন বলে চেয়ারম্যান টিপু জানিয়েছেন।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ( ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, সুন্দরবনে বাঘের উপদ্রব থাকাটাই স্বাভাবিক। বনরক্ষী, ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যরা সর্বদা গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকার জন্য প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং বনসংলগ্ন ভরাট হওয়া ভোলা নদী পুনঃ খননসহ লোকালয়ে বণ্যপ্রাণী ঠেকাতে বনের সীমনায় নাইলনের ফেন্সিং দেওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে বলে ডিএফও জানিয়েছেন।


আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০