রোজা রেখে যে কাজ করলে পুণ্যার্জন হবে না


এমদাদুল হক তাসনিম প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৪, ২০২২, ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ / Print This Post Print This Post
রোজা রেখে যে কাজ করলে পুণ্যার্জন হবে না

 

আল্লাহ তায়ালা বিশেষ অনুগ্রহ করে আমাদের রমজান মাস দান করেছেন। রমজান হলো বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। কুরআন নাজিলের মাস। এ মাস দয়াময় আল্লাহর করুণা লাভের সুবর্ণ সুযোগ। তাঁর নৈকট্য লাভের উত্তম সময়। পরকালীন পাথেয় অর্জনের সময়। তিনি এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তে দান করেছেন অশেষ খায়ের-বরকত ও অফুরন্ত কল্যাণ।

রমজান মাসে মানুষের প্রত্যেকটি আমল বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। একটি নেকি ১০ গুণ থেকে (ক্ষেত্র বিশেষে) ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘কিন্তু রোজার ব্যাপারটি ভিন্ন। কারণ রোজা আমার জন্য। সুতরাং তার প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করব।’ (সহিহ বুখারি)

করোনার প্রকোপ বলা চলে কেটে গেছে। মুমিন মুসলমানগণ সিয়াম সাধনায় ব্রত রয়েছেন। রমজানের আজ বারোতম দিন। অনেকগুলো রোজা ইতোমধ্যে চলে গেছে। তথাপি পুণ্যার্জনে রোজাদারদের কিছু কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।

বিলম্বে ইফতার করা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেরিতে ইফতার করতে নিষেধ করেছেন। সময়মতো দ্রুত ইফতার করলে উম্মাহ কল্যাণের ভেতর থাকবেন বলেছেন। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ তত দিন কল্যাণের ওপর থাকবে, যত দিন তারা অবিলম্বে ইফতার করবে।’ (সহিহ বুখারি)
ইফতার তাড়াতাড়ি করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তো প্রিয়, স্বয়ং আল্লাহর কাছেও প্রিয়। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে সেই বেশি প্রিয় যে তাড়াতাড়ি ইফতার করে।’ (তিরমিজি)

সাহরি না খাওয়া

সাহরি অনেক বরকতময় খাবার। রাসুল সা. সাহরি খেতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সাহরি খেতে না পারলে অন্তত অল্প কিছু হলেও খেয়ে নেওয়া উত্তম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। কেননা, সাহরিতে বরকত রয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম) অন্য হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সাহরি খাওয়া বরকতময় কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সাহরি কর। কারণ যারা সাহরি খায় আল্লাহ তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, ইবনে হিব্বান)

জামাতের ফরজ আদায়ে অলসতা

রমজান মাসে সাধারণত রোজাদাররা নামাজের সময় মসজিদ অভিমুখে যাত্রা করেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে সমবেত হয়ে জামাতে আদায় করেন। এভাবে রোজাদার মুসল্লিরা মসজিদে নামাজ পড়তে এলে তাঁদের পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। আর এতে ২৭ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন নামাজ জামাতে আদায়ে অলসতা তৈরি না হয়।

কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকা

রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই রমজানের সময় যেন কোনোভাবে হেলায়-খেলায় নষ্ট না হয়; সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে রমজানের শেষ দিনগুলোতে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে যান। অথচ এমন করা উচিত নয়। বরং শেষ মুহূর্তের আমলে মগ্ন থাকা চাই।

অপচয় ও অপব্যয় করা

অপচয় কিংবা অপব্যয় গর্হিত অভ্যাস। পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’ (বনি ইসরাইল : ২৭) এছাড়া আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অনেক স্থানে অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে অপচয় রোধ করতে গিয়ে কৃপণতা অবলম্বন করবে। মহান আল্লাহ কৃপণদের পছন্দ করেন না। অপচয় ত্যাগ করার অর্থ হলো মধ্যপন্থা অবলম্বন করা।

দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা

পুণ্যার্জনের মাস রমজানে বেশি বেশি আমলের কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়াবি নানা কাজে। এমনটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফার করা উচিত। হাদিসে এসেছে, ইফতারের মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। (জামিউস সগির)

পণ্যের দাম বাড়িয়ে সংকট তৈরি করা

ভোক্তাদের জিম্মি করা জায়েজ নয়। কেউ তা করে বিত্তশালী হয়ে গেলেও লাভ নেই। তার অবৈধ সম্পদ জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। দুনিয়ার জীবনেও তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া উপার্জন হারাম হওয়ার কারণে নামাজ, রোজা, হজ, দান-সদকা কিছুই কবুল হবে না। হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ)

এছাড়াও আরও কিছু বিষয় রয়েছে রোজাদার ব্যক্তিকে সেগুলো থেকেও বিরত থাকতে হবে। যেমন : হক আদায় না করে কোরআন খতম করা, মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা, লোক দেখানো ইবাদাত করা, বেশি বেশি খাওয়া, বেশি বেশি ঘুমানো, অশ্লীল ছবি-নাটক ইত্যাদি দেখা, বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের যথাযথভাবে রমজান পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।


আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০