বরগুনার আমতলীতে প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে তরমুজের ফল ধরা ও হস্ত পরাগায়নের পদ্ধতি অবলম্বন করেও তরমুজ গাছে ফল ধরানো যায়নি। কিছু গাছে ফল ধরলেও তা পরিপক্ক না হওয়ায় বর্তমানে ওই তরমুজ ক্ষেতগুলো গরুর খাবারে পরিণত হয়েছে।
ধার দেনা করে তরমুজ চাষ করা উপজেলার অন্তত সহা¯্রাধিক তরমুজ চাষি নিঃস্ব হয়ে গিয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিঃস্ব চাষিরা সরকারীভাবে সহায়তার দাবী জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন গুলিশাখালী, কুকুয়া, আঠারোগাছিয়া, হলদিয়া, চাওড়া ও সদর ইউনিয়নের ৫ হাজার তরমুজ চাষি এ বছর ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। চাষিদের নিরলস পরিশ্রমে ভালো তরমুজ গাছ হয়েছে। কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধেছিল। নিম্নমানের বীজ রোপণ ও অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করায় তরমুজ গাছে মৌমাছি ও উপকারী কীটপতঙ্গ না পড়ায় গাছে প্রচুর ফুল ধরলেও প্রাকৃতিকভাবে পরাগায়ন না হওয়ায় ফল ধরেনি। উপজেলার অন্তত ২০ থেকে ৩০ ভাগ তরমুজ ক্ষে্েতর এমন অবস্থায় কৃষি বিভাগ হস্ত পরাগায়নের পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু হস্ত পরাগায়ন পদ্ধতি অবলম্বন করেও কোন কাজে আসেনি।
গাছে ফলন না ধরায় কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে বলে দাবী ভূক্তভোগী কৃষকদের। ফলে উপজেলার সহা¯্রাধিক তরমুজ চাষী নিঃস্ব হয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন এবং সরকারীভাবে সহায়তার দাবী জানিয়েছেন।
রবিবার সরেজমিনে উপজেলার চন্দ্রা, রাওঘা, কুকুয়াহাট, পশ্চিম গাজীপুর, সোনাখালী, মহিষডাঙ্গা, টেপুড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ ভরা তরমুজ ক্ষেত। কিন্তু কোন গাছে তরমুজ নেই। আবার অনেক ক্ষেতে ছোট ছোট তরমুজ হলেও তা পরিপক্ত হয়নি। গাছগুলো শুকিয়ে পুড়ে গেছে। এতে বর্তমানে তরমুজ ক্ষেতগুলো গরুর খাবারে পরিণত হয়েছে।
টেপুড়া গ্রামের সফল তরমুজ চাষি ও ইউপি সদস্য আবু ছালেহ বলেন, ওই গ্রামে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ তরমুজের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে শতাধিক চাষীর ক্ষেতে তরমুজ না হওয়ায় তাদের নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হবে।
হলদিয়া গ্রামের হুমায়ূন কবির বলেন, হলদিয়াসহ আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ চাষির ক্ষেতে এবার তরমুজ হয়নি। কৃষি অফিসের পরামর্শে হস্ত পরাগায়ন করেও কোন লাভ হয়নি।
টেপুরা গ্রামের কৃষক মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্ত্রীর ব্যবহৃত গহনা বন্দক রেখে ও ধার দেনা করে তিন একর জমিতে প্রায় দুই লক্ষ টাকা খরচ করে তরমুজ চাষ করেছিলাম কিন্তু এক টাকাও বিক্রি করতে পারিনি। গাছে অধিক ফুল আসলেও ফল হয়নি। কৃষি অফিসের পরামর্শে হস্ত পরাগায়ন করেও কোন কাজে আসেনি। কিভাবে ধার দেনা পরিশোধ করবো সেই চিন্তায় ঘুম হারাম।
সোনাখালী গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, মুই ধার দেনা হইর্যা ক্ষেতে তরমুজ চাষ হরছি। হেই ক্ষেতে তরমুজ অয়নি। মুই শ্যাষ হইয়া গেছি। এ্যাহন সরকার যদি মোরে সাহায্য সহযোগিতা না হরে হ্যালে মোর দ্যাশ ছাইর্যা পলাইয়া যাইতে হবে।
সদর ইউনিয়নের মাইঠা গ্রামের আঃ সালাম বলেন, এ বছর ধার দেনা করে তরমুজ চাষ করেছি। গাছে তরমুজ হয়েছে কিন্ত সেই তরমুজ পরিপক্ক হওয়ার পূর্বেই অধিকাংশ গাছ পুড়ে মারা গেছে। এখন আমার তরমুজ ক্ষেত গরুর খাবারে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া তরমুজ চাষী মনির মুসুল্লী, প্রিন্স মৃধা, শাহীন, মামুন বলেন, ক্ষেতে তরমুজতো হয়নি। পুড়ে গাছগুলো মরে গেছে। এখন কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবো সেই চিন্তায় ঘুম হারাম।
স্থাণীয় একাধিক ব্যক্তিরা জানায়, এ বছরের মত তরমুজ চাষিদের এমন অবস্থা কখনো হয়নি। গাছে ফুল ধরে ফল হয়না, গাছ পুড়ে যাওয়া, আবার কোন কোন ক্ষেতে ফল হয়ে তা পরিপক্ক না হওয়ার অবস্থা কখনো হতে দেখিনি। অনেক তরমুজ চাষিরা পথে বসে গেছেন। অনেকে ঋণ করে তরমুজ চাষ করেছেন। ওই ঋণের বোঝা নিয়ে চাষিরা এখন দিশেহারা হয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। তারা নিঃস্ব হয়ে যাওয়া চাষিদের সরকারীভাবে প্রনোদনা দেয়ার দাবী জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম মুঠোফোনে বলেন, মানসম্মত বীজ রোপন করতে না পারা ও অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিকভাবে পরাগায়ন ঘটেনি। ফলে গাছে ফুল হলেও ফল (তরমুজ) হয়নি। এছাড়া সরকারীভাবে কৃষকদের জন্য তরমুজের বীজ সরবরাহ না করায় বে-সরকারী কোম্পানীগুলো নষ্ট বীজ দিয়ে কৃষকদের সাথে প্রতারন করেছে। তিনি আরো বলেন, সরকারীভাবে অত্র উপজেলায় কতজন তরমুজ চাষীর ক্ষেতে তরমুজ হয়নি তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও অনুমান সহা¯্রাধিক তরমুজ চাষীদের ক্ষেতে তরমুজ হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :