২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

তালতলীতে টেন্ডার ছাড়াই মাদ্রাসার ভবন বিক্রি করে টাকা অত্মসাৎ

হায়াতুজ্জামান মিরাজ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি। , প্রকাশিত হয়েছে-

 

 

বরগুনার তালতলী উপজেলা নির্বাহি অফিসারের অনুমতি ও টেন্ডার না দিয়েই উপজেলার দক্ষিন ঝারাখালী ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার একটি পুরাতন ভবন বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ পাওয়া গেছে মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা আব্দুল জব্বার ও সভাপতি সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে।

ওই মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শাখার কারী নুরুল আমিন চলতি বছরের মার্চ মাসে তালতলী উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বরাবরে পুরাতন ভবন বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা সঙ্গীতা রাণীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর উপজেলার দক্ষিণ ঝাড়াখালী ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সরকারীভাবে একটি নতুন ভবন বরাদ্দ পায়। ওই বছর মার্চ মাসে ঠিকাদার কর্তৃক ভবন নির্মাণ করতে পূর্বের পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী ভবন ভাঙ্গার পূর্বে উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও শিক্ষা অফিসারের অনুমতি এবং টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতি কোন রকমের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নিজেরা গোপনে ওই পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে বিক্রি করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পূর্বের ভবনটি দৈর্ঘ্য ৮৫ ফুট প্রস্থ প্রায় ১৮ ফুট টিনশেড একতলা বিল্ডিং যার বর্তমান আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। ওই ভবনটি কোন রকমের টেন্ডার না দিয়েই গোপনে বিক্রি করে দেন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আব্দুল জব্বার ও সাবেক সুপার বর্তমান মাদ্রাসা সভাপতি মাওলানা আব্দুল মতিন। এক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়কে অবহিত পর্যন্ত করা হয়নি। ওই মাদ্রাসার ভবনটি বিক্রি করে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওঃ আঃ জব্বার ও মাদ্রাসার বর্তমান কমিটির সভাপতি সাবেক সুপার মাওঃ আঃ মতিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আলাপ করলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়াও তিনি গোপনে ভূয়া রেজুলেশন বানিয়ে শিক্ষকদের স্বাক্ষর জাল করে প্রতারণা করেন বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন।

অভিযোগকারী শিক্ষক কারী নুরুল আমিন বলেন, টেন্ডার ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষকদের না জানিয়ে তাদের পছন্দের কিছু শিক্ষক নিয়ে করোনাকালীন বন্ধের সময় মাদ্রাসার সাবেক সুপার, বর্তমান সভাপতি ও মাদ্রাসার বর্তমান সুপার (ভারপ্রাপ্ত) গোপনে মাদ্রাসার মালামাল স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে।

মাদ্রাসা সংলগ্ন বাড়ির মোঃ মোস্তফা ও মোঃ মোর্তজা বলেন, ওই মাদ্রাসার পূর্বের একটি একতলা বিল্ডিং ছিল যা ভারপ্রাপ্ত সুপার আঃ জব্বার ও সভাপতি সাবেক সুপার মাওঃ আঃ মতিন ভেঙ্গে প্রায় ত্রিশ হাজার ইট, টিন, কাঠ ও দরজা-জানালা বিক্রি করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুল জব্বার এর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। একবার বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছি। আবার বলেন, ঠিকাদার রাতের আধারে ভেঙ্গে ফেলেছেন তা আমি জানিনা। আবার কখনও বলেন, তিনি ভবনটি ভাঙ্গেননি।

ওই মাদ্রাসার সাবেক সুপার বর্তমান সভাপতি ভবন ভেঙ্গে তা বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করার বিষয় অস্বীকার করে বলেন, মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

জানতে চাইলে তালতলী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুল কবির মোঃ কামরুল হাসান বলেন, টেন্ডার ছাড়া ভবন ভাঙ্গা মালামাল বিক্রি করা যাবে না। যারা গোপনে ভবন ভেঙ্গে বিক্রি করেছেন তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ কাওসছার হোসেন বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং তথ্য কর্মকর্তাকে তদন্তভার দেয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।