মাদারীপুর সদর সাবরেজিষ্ট্রি অফিস সিন্ডিকেটদের কমিশন বাণিজ্যর দখলে, ভোগান্তিতে নাগরিকরা


জাহিদ হাসান,মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি: প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২০, ২০২২, ৬:২৮ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
মাদারীপুর সদর সাবরেজিষ্ট্রি অফিস সিন্ডিকেটদের কমিশন বাণিজ্যর দখলে, ভোগান্তিতে নাগরিকরা

 

 

মাদারীপুর সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস এখন দলিল লেখক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের দখলে। দলিল লেখক ও অফিস কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের কবলে জিম্মি হয়ে পড়েছে এখানে সেবা নিতে আসা নাগরিকেরা। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের মত করে নিয়ম তৈরী করে সারা বছরই চলে এই সদর সাব রেজিষ্ট্রেরি অফিসের কার্যক্রম। এসব সিন্ডিকেটের বেপরোয়া দুর্নীতি বাণিজ্যে কাছে জিম্মি সাধারণ নাগরিকেরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদারীপুর শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকার জেলা রেজিষ্ট্রি অফিসের নিচ তলায় সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস। তার পাশেই একটি টিনশেড ঘরে দলিল লেখকদের অফিস। সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে স্থানীয় দলিল লেখকদের সাথে অদৃশ্য কমিশন বাণিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এখানে দলিল করতে আসা সকল সেবা গ্রহীতাকে ১৫ থেকে ২০ পার্সেন্ট হারে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। তাছাড়া কাগজপত্র কোন রকমের ভুল ত্রুটি থাকলে তো কথাই নেই। সেই দলিল রেজিষ্ট্রি করতে বিশেষ হারে উৎকোচ গ্রহণ ছাড়া দলিল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এসব সিন্ডিকেটের কবলে মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। দলিল করতে আসা মানুষেরা তাই বাধ্য হয়েই কোন বিকল্প উপায় না থাকায় সিন্ডিকেটের সদস্যদের চাহিদাকৃত টাকা দিয়েই দলিল সম্মাদন করেন। মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়ন থেকে সাগর সরদার একটি জমি রেজিষ্ট্রি করার জন্য সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে এসেছেন। দশ লাখ টাকা মূল্যমানের তার জমিটিতে সরকারের নির্ধারিত সাড়ে ৬ শতাংশ হারে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার ছাড়াও দলিল লেখক ও সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সিন্ডিকেটকে ৮০ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে।
সিন্ডিকেটের চাহিদা মত টাকা দেওয়ার পরেও তাকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে বসে থাকতে হয়েছে। মাদারীপুর শহরের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাকিব হাসান। তিনি তার চাচাতো ভাইয়ের দুই শতাংশ একটি জমির দলিল করতে এসেছে সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে। কিন্তু সরকারি খরচের ছাড়াও তাকে ৩৫ হাজার টাকা দলিল লেখক ও রেজিষ্ট্রি অফিসের কর্মচারীদের অতিরিক্ত দিতে হয়েছে। সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের শ্যালকের একটি জমি দলিল করানোর কাজে পাশের কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে দুলাল হালদার এসেছেন। অন্য উপজেলার বাসিন্দা হওয়ায় সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে এসে সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে তাকেও গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ৪০ হাজার টাকা। শুধু এই ব্যক্তিরাই নয়। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার যে কোন ব্যক্তিই মাদারীপুর সদর উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে সেবা নিতে এসে সিন্ডিকেটের কবলে পড়েন। মাদারীপুরবাসী এই দালাল সিন্ডিকেটদের কাছে জিম্মি।
সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সেবা গ্রহীতা মোহম্মদ বকুল বলেন, ‘সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল লেখক ও কর্মচারীরা মিলে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরী করেছে। তাদের চাহিদা মত টাকা না দিলে এই অফিসের কোন সেবা পাওয়া যায় না। আমরা অনেকটা বাধ্য হয়েই তাদের চাহিদামত টাকা দিয়ে সেবা নিচ্ছি। আমরা ওদের কাছে জিম্মি ও অসহায়।’

মাদারীপুর বাস-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান হাওলাদার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে সেবা নিতে আসেন। তিনি বলেন, ‘এই অফিসের কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। আমরা চাই, দালাল ও দুর্নীতি মুক্ত এই অফিসটি হোক। এখানে সেবা নিতে এসে যেন আমরা কেউ বিড়ম্বনায় না পড়ি, সরকার যেন সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এখানে বেশি টাকা ছাড়া কোন কাজ করা যায় না।’
তবে, দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কর্মকর্তারা এসব সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করেন। মাদারীপুর সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি দিদার হোসেন বলেন, ‘পার্টিরা এখানে দলিল করতে আসলে আমরা তাদের কাছ থেকে কোন বেশি টাকা নেই না। তারা খুশি হয়ে আমাদের যা দেয়। আমরা তাই নেই।

তিনি বলেন, আমরা সিন্ডিকেট করে কোন কাজ করি না। টাকাও নেই না। যদি কেউ অভিযোগ করে বেশি টাকা নেই, সেটা সত্য না।’
একই ধরনের কথা বললেন সদর উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার শর্মিলী আহমেদ শম্পা। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে কেউ কখনো অভিযোগ নিয়ে আসে না। যদি কেউ বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ দেয়। তাহলে বিষয়টি দেখব। আর আপনারা সাংবাদিক। আপনারাও দেখেন। কোথায় সিন্ডিকেট। বের করেন। আমি এসব জানি না।’

তবে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতি ও কর্মচারীরা সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন জেলা রেজিষ্ট্রার মো. রুহুল কুদ্দুস।

জেলা রেজিষ্ট্রার কুদ্দুস বলেন, ‘এটা তো অনেক দিনের প্রাকটিস। হুট করেই দলিল লেখক সমিতির এই সিন্ডিকেট বদলানো যাবে না। তবে আমরা মানুষকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের জন সচেতনতা মূলক কর্মসূচী গ্রহণ করে থাকি। পাশাপাশি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সকল আবেদন অনলাইনে হয়ে গেলে তখন দুর্নীতি ও বেশি টাকা নেওয়ার যে অভিযেগা আসে, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এটা একটু সময় লাগবে। তবে, কেউ যদি নির্দিষ্ট করে কোন অভিযোগ আমার কাছে দেয়। তাহলে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

মাদারীপুরের সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল লেখক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের সিন্ডিকেট বাণিজ্য বন্ধ করে সরকারি নিয়মের নির্ধারিত ফি এর মাধ্যমে কার্যক্রমর পরিচালনার দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকেরা।


আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০