বরগুনার আমতলীতে ইজারা আদায়ের রশিদ ব্যবহার করে উপজেলার বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে তরমুজ ভর্তি ট্রাক ও তরমুজ কিনতে আসা ব্যাপারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছেন একটি প্রভাবশালী সক্রিয় চক্র। এ নিয়ে ব্যবসায়ী, কৃষক ও ট্রাক চালকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ চাঁদা বন্ধে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলার কুকুয়া, আঠারোগাছিয়া, হলদিয়া, আমতলী সদর ও চাওড়া ইউনিয়নে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তরমুজ ব্যবসায়ী ও ব্যাপারীরা এসে তরমুজ ক্রয় করে তা ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রির জন্য নিয়ে যান। তরমুজ পরিবহনে জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ট্রাক ও পিকআপগুলো গাজীপুর বন্দর, তালুকদার বাজার, সুবান্ধি, কাঠালিয়া, বিশ্বাসের হাট, কুকুয়া হাট এলাকায় অবস্থান করেন। এই সুযোগে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী সক্রিয় চক্র একেকটি ট্রাক থেকে তিন শত, পাঁচ শত ও এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পঁচিশ শত টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন বলে ভূক্তভোগী তরমুজ ব্যবসায়ী ও ব্যাপারীরা অভিযোগ করেন।
চাঁদা আদায়ের জন্য প্রভাবশালী ওই চক্রটি কৌশলে ইজারার নামে ছাপানো রশিদ তারা ব্যবহার করছেন আবার কেহ কেহ রশিদ ছাড়াই বল প্রয়োগ করে টাকা আদায় করছেন। কোন ব্যবসায়ী বা ট্রাক ড্রাইভার চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের তরমুজ পরিবহন করতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তরমুজ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। তারা জানান, দাবীকৃত টাকা না দিলে ঘন্টার পর ঘন্টা তরমুজ ভর্তি ট্রাক আটকে রাখা হচ্ছে। বাধ্যহয়ে চাঁদার টাকা পরিশোধ করেই তাদের ট্রাক ছাড়তে হচ্ছে।
আঠারগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ বাতেন দেওয়ান বলেন, তরমুজ বিক্রির শুরু থেকেই গাজীপুর বন্দর এলাকায় ট্রাক প্রতি চালকদের কাছ থেকে ইজারার নামে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন একটি প্রভাবশালী মহল। তিনি আরো বলেন, ট্রাক চালকরা চাঁদা দিতে না চাইলে তাদের আটকে চাঁদা আদায়ে বাধ্য করা হচ্ছে। চাঁদাবাজদের এমন দৌরাত্ব্যের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে তরমুজ সংশ্লিষ্টরা।
আজ (বৃহস্পতিবার) সরেজমিনে উপজেলার গাজীপুর বন্দর, বিশ্বাসের হাট, অফিস বাজার, তালুকদার বাজার, সুবান্ধি, কুকুয়া হাট, সাহেব বাড়ীসহ উপজেলা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি স্পটে তরমুজ পরিবহনের জন্য একাধিক ট্রাক সড়কের পাশে অবস্থান করছে। ওই সকল ট্রাক থেকে নানা কৌশলে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে ড্রাইভার ও তরমুজ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
একটি বিশ্বস্থ্য সূত্র জানায়, উপজেলার আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র সংলগ্ন সড়কে প্রতিটি ট্রাক থেকে জোরপূর্বক ৮০০ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত টাকা আদায় করেছেন ওই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ওহাব হাওলাদারের লোকজন।
গাজীপুর এলাকায় ট্রাক ড্রাইভার সোলায়মান মিয়া বলেন, চাঁদা না দেওয়ায় আমার তরমুজ ভর্তি ট্রাকটি ৩ ঘন্টা আটকে রাখা হয়েছে। তারপর ১৫০০ টাকা চাঁদা পরিশোধ করার পরে আমার ট্রাকটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বাসের হাট এলাকায় অপর ট্রাক ড্রাইভার সফিউল্লাহ জানায়, ইজারার রশিদ দিয়ে আমার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে।
খুলনার আঃ হালিম ব্যাপারীর কাছ থেকে সুবন্দি বাজারের ইজারাদারের রশিদে তরমুজের ট্রাক বাবাদ ২৫০০ টাকা আদায় করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়কারীরা জানান, ইজারা নিয়ে ইজারার নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ট্রাক ও বেপারীদের কাছ থেকে রশিদ দিয়ে তারা টাকা তুলছেন। কোথা থেকে ইজারা নিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে পারেননি।
উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, তরমুজ পরিবহনে চাঁদা বন্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে তরমুজ চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এরকম চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্ত সাপেক্ষে চাঁদাবাজি বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :