আমতলীতে রিকসা ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য, চালকদের হাতে যাত্রীরা নাজেহাল


হায়াতুজ্জামান মিরাজ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি। প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৩, ২০২২, ৫:৩২ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
আমতলীতে রিকসা ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য, চালকদের হাতে যাত্রীরা নাজেহাল

 

ব্যাটারী চালিত অটো রিকসায় ১০ টাকা করে পৌর টোল আদায় করাকে কেন্দ্র করে হঠাৎ এবং পৌরসভার নাম ভাঙ্গিয়ে বরগুনার আমতলী পৌরশহরে রিকসার ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। রিকসা চালকরা তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে। ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন যাত্রী ও চালকদের মধ্যে অপ্রতিকর ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় রিকসা চালকদের হাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন পৌর শহরে রিকশায় চলাচলরত যাত্রীরা।

প্রতিদিন নানান প্রয়োজনের তাগিদে পৌর শহরের লোকজনকে রাস্তায় বের হতে হয়। তারা স্বল্প খরচে রিকসায় করে চলাচল করে থাকেন। তবে বেশ কয়েকদিন ধরে রিকসায় উঠে তারা বিপাকে পড়েছেন তারা। যে সকল যাত্রীরা গন্তব্যে যাওয়ায় জন্য রিকসার ভাড়া ঠিক না করে উঠছেন তারাই গন্তব্যে গিয়ে পড়ছেন চরম বিপাকে। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে যাত্রীরদের সাথে চালকদের তর্কাতর্কি ও হাতাহাতিতে পর্যন্ত জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। প্রতিটি রিকসা চালক দ্বিগুন ও তিনগুন ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে, এক কথায় যাত্রীদের পকেট কেটে নিচ্ছেন। প্রতিবাদ করলেই চালকদের হাতে তাদের নাজেহাল হতে হচ্ছে। আবার রিবসা চালকরা দাবী করেন তাদেরকে পৌরসভা থেকে ভাড়া বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আমতলী পৌরসভা কার্যালয় থেকে নতুন বাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত পূর্বের ভাড়া ছিলো জনপ্রতি ১০ টাকা এখন নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা। তিন রাস্তা থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া ছিলো ৫টাকা এখন নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা। ফেরীঘাট থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত ভাড়া ছিলো জনপ্রতি ৫টাকা এখন নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা। হাসপাতাল থেকে পুরান বাজার (পশ্চিম মাথা) পর্যন্ত পূর্বের ভাড়া ২০ টাকা হলেও এখন নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। ছুড়িকাটা থেকে মেয়র মার্কেট পর্যন্ত ভাড়া ছিলো ২০ টাকা এখন নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। বটতলা থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত ২০ টাকার ভাড়া এখন ৫০ টাকা। একে স্কুল থেকে ফেরীঘাট ২০ টাকার ভাড়া এখন ৫০ টাকা। চৌরাস্তা থেকে লোচার ভাড়া ছিলো ৫ টাকা এখন নেয়া হচ্ছে ১০টাকা। এছাড়া পৌর শহরের অভ্যান্তরে চলাচলরত প্রতিটি স্থানে রিকসা চালকরা দ্বিগুন ও তিনগুন ভাড়া আদায় করছে বলে ভূক্তভোগী পৌরবাসীরা জানায়।

আজ (শনিবার) শহরের একাধিক স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীদের সাথে ভাড়া নিয়ে চালকদের সাথে একাধিক তর্কাতর্কি ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করায় বেশ কয়েকটি স্পটে রিকসা চালকদের হাতে যাত্রীরা নাজেহাল হয়েছেন। বিশেষ করে মহিলা যাত্রীরা বেশী নাজেহালের স্বীকার হচ্ছেন। অনেকে এখন রিকসায় না উঠে পায়ে হেটে চলাচল করছেন।

রিকসা ভাড়া নিয়ে চালকদের হাতে নাজেহাল হওয়া যাত্রী আঃ সালাম বলেন, বটতলা থেকে বন্দরের (মেয়র মার্কেট) পর্যন্ত অটো রিকসার পূর্বের ভাড়া ছিলো ১০ টাকা। আজকে আমার কাছ থেকে ২০ টাকা রাখায় আমি প্রতিবাদ করলে ৪ থেকে ৫ জন রিকসা চালক মিলে আমাকে নাজেহাল করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান বাজারের সম্বভ্রান্ত পরিবারের এক গৃহবধূ বলেন, আমি প্রতিদিন বাসা থেকে চৌরাস্তায় মাছ বাজারে ১৫ টাকা রিকসা ভাড়া দিয়ে বাজার করতে যাই। আজ আমার কাছ থেকে ৩০ টাকা রাখছে। আমি প্রতিবাদ করলে আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করে রিকসা চালক আমাকে বলেন, ভাড়া বেশী কেন রাখছি তা মেয়রকে জিজ্ঞেষ করেন। আমি লোক লজ্জার ভয়ে আর কিছু বলিনি।

কলেজ রোডের এক গৃহবধূ বলেন, আমি প্রতিদিন আমার সন্তানকে সাথে নিয়ে বন্দর প্রাইমারি স্কুলে যাই। আগে রিবসা চালকরা ভাড়া নিতো ১০ টাকা। এখন তারা ভাড়া চাচ্ছে ২৫ টাকা। তাই কষ্ট হলেও বাধ্যহয়ে বাচ্ছাকে নিয়ে পায়ে হেটে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিকসা চালকদের হাতে নাজেহাল হওয়া এক শিক্ষক বলেন, দুই দিন রিকসায় উঠেছি বাড়তি ভাড়া দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় চালকদের হাতে চরম বেইজ্জতি হয়েছি। সেজন্য এখন আর রিকসায় উঠি না, পায়ে হেটে বাজার সদায় করি। তিনি প্রশ্ন করে আরো বলেন, চালকদের এ নৈরাজ্য কি দেখার মত পৌরসভায় কেহ নেই।

আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আইজীবি অ্যাডঃ দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ছোট্ট একটি পৌর শহরে যে পরিমাণ রিকসা ভাড়া বাড়াইতে তাতে সিন্ধান্ত নিছি রিকসা চালকদের সাথে অহেতুক কথা না বাড়িয়ে প্রতিদিন বাসা থেকে হেঁটে কোর্টে আসা যাওয়া করবো। এতে শরীরও ভালো থাকবে।

অটো রিকসা চালক নজরুল ইসলাম, জয়নাল, শামীম ও সোলায়মান বাড়া বাড়ানোর বিষয়ে বলেন, প্রতিদিন আমাদের একেকটি ব্যাটারী চালিত অটো রিকসার জন্য ১০ টাকা করে পৌর টোল দিতে হচ্ছে। এ জন্য মেয়র আমাদের ভাড়া বাড়াতে বলছে। সেজন্য আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি। তারা আরো বলেন, যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে চায় না। প্রতিদিন এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে কমবেশী ঝামেলা, কথা কাটাকাটি ও তর্কাতর্কি হচ্ছে। তবে মহিলা যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া নিয়ে বেশী ঝামেলা করে।

আমতলী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ মতিয়ার রহমান মুঠোফোনে বলেন, পৌর সভার অভ্যান্তরে প্রতিটি অটো রিকসা থেকে ১০ টাকা করে পৌর টোল আদায় করার নির্দেশণা দেওয়া হলেও রিকসা ভাড়া বাড়াতে বলা হয়নি। দ্রুত বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্য থেকে যাত্রীদের পরিত্রান দিতে পৌর নাগরিকদের সভা আহবান করে ভাড়া নির্ধারণ করে জনস্বার্থে পৌরসভার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে ভাড়ার চার্ট টানিয়ে দেয়া হবে।


আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০