২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

পুলিশ কনস্টেবল বন্ধুর ইয়াবার ব্যাগ বহন করতে গিয়ে অশীম নামের এক যুবক আটক

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : , প্রকাশিত হয়েছে-

 

 

পুলিশ কনস্টেবল বন্ধু উৎসব কুমার সরকারের ব্যাগ বহন করতে গিয়ে ইয়াবা সহ র‍্যাবের হাতে আটক হয়েছেন অশীম কুমার নামের এক বন্ধু ।

গত ১৯ এপ্রিল ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের হোটেল ফুড ভিলেজের সামনে থেকে ৪ হাজার ২৪৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ র‍্যাব – ৫ নাটোর সিপিসি- ২ তাকে আটক করে এ তথ্য নিচ্চিত করেন র‍্যাব-৫ নাটোর সিপিসি- ২ এর কোম্পানি অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফরহাদ হোসেন৷

পুলিশ কনস্টেবল উৎসব এবং অসীম কুমারের বাড়ী গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের কিশামত গোপালপুর (সুখানদিঘী) গ্রামে। সম্পর্কে তারা চাচাতো জ্যাঠাতো ভাই ও ঘনিষ্ট বন্ধু।

উৎসব ওই এলাকার উজ্জল কুমার সরকারের ছেলে এবং অসীম বাদল চন্দ্র সরকারের ছেলে। অসীম স্থানীয় সুখানদিঘী বাজারে টিভি মেকানিক ও মনোহরি দোকান ব্যবসা করতেন।
আর এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায় উৎসব কক্সবাজার জেলায় আমর্ড পুলিশে কর্মরত।

এদিকে অশীম কুমারের পরিবারের দাবি, বন্ধু পুলিশ কনস্টেবল উৎসব তাকে ১৫ এপ্রিল সকালে ফোন করে কক্সবাজারে ডাকে। সেখানে কয়েকদিন ঘুরে ফিরে দুই বন্ধুর এক সাথে বাড়ি ফেরার কথা।

কিন্তু ছুটি না পাওয়ায় ১৯ এপ্রিল বন্ধু অসীমকে কক্সবাজার থেকে একটি কাপড় ভর্তি ব্যাগ সহ বাসে তুলে দেয় বন্ধু উৎসব। ব্যাগটি বাড়ীতে তার বাবার হাতে দিতে বলে উৎসব।

কিন্তু বিধি বাম। সেই ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় ইয়াবা ট্যাবলেট। মাদক ব্যবসার অভিযোগে অসীম কে আটক করে র‍্যাব । পরে শেরপুর থানায় মাদক আইনে মামলা হলে কারাগারে যান অসীম কুমার।

এখবর বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকায় ও অনলাইনে প্রচার হলে তা এলাকার অনেকেরই নজড়ে পড়ে। এরপর এলাকায় শুরু হয় দুই বন্ধুকে নিয়ে নানা গুঞ্জন।

এলাকাবাসী জানায়, উৎসব ছুটিতে বাড়িতে এসে মাদক ব্যবসা করত । তার কাছ থেকে ইয়াবা কিনে বর্তমানে ওই এলাকার অনেক যুবক এখন মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা নেশার টাকা যোগাড় করতে গিয়ে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

স্থানীয় সাইফুল ইসলাম সহ গ্রামবাসী জানায়, কিছুদিন আগে মাদকের একটি বরো চালান নিয়ে আসে উৎসব৷ তার পরিচিত বিভিন্ন ব্যাক্তিদের কাছে সেই ইয়াবা বন্ঠন করে ও ঐ স্থানে বসেই তারা ইয়াবা সেবন করে৷ এই সময় বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী টের পেয়ে তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। তখন পুলিশ কনস্টেবল উৎসব চাকরি হারানোর ভয়ে এলাকাবাসীর কাছে আটক থাকা অবস্থায় দ্রুত তার বাবা উজ্জ্বল কুমার সরকারকে ঘটনাস্থলে ডাকে পরে উৎসবের বাবা এসে এলাকাবাসীকে হাতেপায়ে ধরে লাখ টাকা খরচ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়৷

এদিকে উৎসবের ফাঁদে পা দিয়ে আটক হওয়ার পর অসীমের সাথে জেলখানায় দেখা করতে যায় তার পরিবার। সেসময় বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন অসীম কুমার।

পরে ঘটনা জানার পর অসীমের পরিবার স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সবুজ সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের কাছে নিরপরাধ অসীমকে ফাঁসানোর জন্য উৎসবের বিচার দাবি করেন।

শুরু হয় দিনে রাতে দফায় দফায় বৈঠক। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা উৎসবের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে উৎসব দুঃখ প্রকাশ করে এবং অসীমকে জামিনে মুক্ত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা করা আছে বলে আশ্বাস দেন।

এদিকে অশীমের দাদা বিভুতিভূষন সরকার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন আমার নিরপরাধ নাতিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বিপদে ফেলে দিল৷ তিনি আরো বলে উৎসব কক্সবাজার থেকে প্রায় মাদক নিয়ে এসে এলাকায় বিক্রি করতো। কিছুদিন আগেওতো মাদক বিক্রির সময় এলাকাবাসী তাকে আটক করে। পরে ১লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে সেখান থেকে ছাড়া পায়।

অশীমের চাচি সবিতা রানী ঐ মিটিং চলাকালীন উৎসবের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আজ উৎসবের ফাঁদে পড়ে আমার ভাতিজা অশীম কারাগারে। এখন না হয় আপনারা নিজে বাচার জন্য অশীমের জামিনের ব্যবস্থা করতে চাইছেন কিন্তু পরে যদি আর জামিনের ব্যাবস্থা না করেন তাই আমাদেরকে একটি লিখিত কাগজ দিন একথা শুনে উৎসবের বাবা কোন কথা না বলে চুপ করে থাকেন এবং অনেকক্ষন চুপ থাকার পর বলেন এখন তোমরা সবাই চুপ থাকো কাউকে কিছু বলার দরকার নাই আগে আমারাও বাচি তোমরাও বাচো পরে অশীম বের হওয়ার পর একটা ব্যাবস্থা হবে৷ তখন অশীমের চাচী সবিতা রানী বলেন এই ক্ষতি কোনোদিনই পুরন হবার নয়। এসময় পুলিশ সদস্য উৎসবের শাস্তির দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে, ঐ ওয়াডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সবুজ বলেন,ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। অসীমের মতো ভালো ছেলে এই এলাকায় কমই দেখা যায়। উৎসব পুলিশ সদস্য হয়ে মাদক ব্যবসা করতো সেটি আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু অসীম ওর ফাঁদে পা দেবে ভাবতেই পারিনি কোনোদিন।

এদিকে অশীমের ফুপু বলেন আমাদের ইউপি সদস্য সবুজ ভাই এসে দুই পরিবারকে নিয়ে বসে অশীমের জামিনের খরচ বাবদ এক লক্ষ টাকা ধরে । আর সেই টাকার মধ্য উৎসবের বাবা উজ্জল কুমার সরকার ৭৫ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছেন আর ২৫ হাজার টাকা আমাদেরকে জোগার করতে বলেছে৷ তিনি বলেন আমরা গরিব মানুষ আমরা এই ২৫ হাজার টাকা কিভাবে জোগার করবো৷

তবে এলাকাবাসীর দাবী যার কারনে অশীমের মতো একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তানকে জেলে যেতে হলো তাকে আইনের আওতায় নিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করলেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে৷
সেই সাথে দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ট তদন্ত করে এই ঘটনার সাথে জরিত ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী