১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শরণখোলায় বেরীবাঁধের কাজ শেষের আগেই ব্লক ধসে পড়ছে : এক বছরেও নদী শাসন প্রকল্প অনুমোদন হয়নি

শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি , প্রকাশিত হয়েছে-

শরণখোলা : শরণখোলার গাবতলা পয়েন্টে বেরিবাঁধের সিসি ব্লক ধসে যাচ্ছে বলেশ্বর নদীতে

শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন বেরীবাঁধের কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাধের সিসি ব্লক নদীতে ধসে পড়ছে। অপরদিকে, ৬২ কিলোমিটার বেরিবাঁধের ৭/৮ কিলোমিটার জায়গা বাঁধে কোন সিসি ব্লক দেওয়া হয়নি। নদী শাসন না করায় সাড়ে তিনশত কোটি টাকার এই বাঁধ পানিতে ভেসে যাবে বলে সাধারণ মানুষের আশংকা। তিন বছর মেয়াদী বাধঁ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ছয় বছরে গড়িয়ে আসছে ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা।

সরেজমিনে বেরীবাঁধে গিয়ে দেখা যায়, সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা,দক্ষিণ সাউথখালী, উত্তর সাউথখালী, বাবলাতলা, রায়েন্দাতাফালবাড়ী,এবং রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজেশ্বর পয়েন্টে বলেশ্বর নদীর তীরে নির্মিত বেরিবাঁধের সিসি ব্লক খসে খসে পড়ছে।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিণ সাউথখালী (গাবতলা) ওয়ার্ডের মেম্বার জাকির হোসেন হাওলাদার জানান, বলেশ্বর নদীর তীরে নির্মীত নতুন ওয়াপদা বেরীবাঁধের সিসি ব্লক ধসে নদীতে পড়ছে। মাঝে মাঝে বাঁধে ফাটল দেখা দেয় ঠিকাদারের লোকজন এসে কোন রকমে ফাটল মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়ে যায়। বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে মাটির বদলে বাঁধে বেশিরভাগ বালি ব্যবহার করা হয়েছে এবং নদী শাসন না করায় বাঁধে ফাটল দেখা দেয় বলে ঐ মেম্বার জানিয়েছেন। গাবতলা এলাকার সাবেক মেম্বার মোশারেফ হোসেন, গ্রামবাসী হাফেজ কাজী, খালেক হাওলাদার, আসাদ খান, আসাদুল খান ও তরিকুল ইসলামসহ অনেক গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, বেরিবাঁধ নির্মাণে ব্যপক দূর্ণীতি করায় বাঁধ টেকসই হয়নি তাছাড়া নদী শাসন না হওয়ায় শত শত কোটি টাকার বেরিবাঁধ মানুষের কাজে আসবেনা তা বলেশ্বর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, গাবতলাসহ বাঁেধর বিভিন্ন পয়েন্টে মাঝে মাঝে ফাটল ও দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। বলেশ্বর নদী শাসন ছাড়াই শত শত কোটি টাকা ব্যায়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মীত বেরিবাঁধ বøকসহ নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে চেয়ারম্যান আশংকা ব্যক্ত করেছেন। অপরদিকে,শরণখোলার রায়েন্দাতাফালবাড়ী, মোরেলগঞ্জের কুমারখালী, সন্যাসী ও আমতলী পয়েন্টের ৭/৮ কিলোমিটার জায়গা বেরিঁবাধে কোন সিসি ব্লক দেওয়া হয়নি ফলে ঐ এলাকায় বাঁধ ভাঙ্গছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সাড়ে তিনশত কোটি টাকা ব্যয়ে শরণখোলা-মোরেলগঞ্জের ৩৫/১ পোল্ডারে ৬২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য টেকসই বেরীবাঁধ নির্মাণের কাজ ২০১৬ সালের জানুয়ারী মাসে শুরু হয়। তিন বছরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়েছে। চীনের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেরিবাঁধ নির্মাণের কাজ করছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন শরণখোলার গাবতলাসহ উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে বেরিবাঁধ পরিদর্শণ করে বলেন, যতদ্রæত সম্ভব বলেশ্বর নদী শাসন ও অপরিকল্পিত স্লুইসগেট সংস্কারসহ নতুন স্লুইসগেট করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপকূলীয় বেরিবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের ( সি ই আই পি) খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম মুঠোফোনে ইত্তেফাককে বলেন, শরণখোলায় বেরিবাঁধের সিসি ব্লক ধসে যাওয়ার খবর তার জানা নেই বিষয়টি খোঁজ নিবেন প্রয়োজনে নতুন ব্লক বসাবেন। এক বছর আগে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা বলেশ্বর নদী শাসন প্রকল্পের ফাইল অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় অর্থ পেলে নদী শাসনের কাজ শুরু করা হবে এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ উচ্চপর্যায়ের তৎপরতা চালানো জরুরী। করোনাসহ নানা জটিলতায় তিন বছর মেয়াদী বেরিবাঁধের কাজের মেয়াদ দুইদফা বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩০ জুন বেরিবাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে ঐ নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন।