২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ভালোবেসে ছেলের বিয়ের অপরাধে বৃদ্ধ বাবাকে মারধর, ভিডিও ভাইরাল

হায়াতুজ্জামান মিরাজ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি। , প্রকাশিত হয়েছে-

 

 

বরগুনা: আমতলীর হলদিয়া ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামে ভালোবেসে ছেলে বিয়ে করার অপরাধে তার বৃদ্ধ বাবাকে ঘর থেকে টেনে হেছরে বের করে জুতাপেটা ও বাঁশের লাঠি দিয়ে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে মেয়ের ভগ্নিপতি ও তার ভাগিনার বিরুদ্ধে। এঘটনায় একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় বিচার দাবী করেছেন গ্রামবাসী। ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার দুপুরে ভূক্তভোগির হামেদ আকনের বাড়ীতে।

জানা গেছে, হলদিয়া ইউনিয়নের কুলাইরচর গ্রামের এমপির বাজারের বাসিন্দা রাজ্জাক মোল্লার মেয়ে মনিরা বেগম ওরফে মনুকে (২২) ভালোবেসে ৪ বছর আগে কাঠালিয়া গ্রামের হামেদ আকনের ছেলে নিপু আকন (২৪) গোপনে বিয়ে করেন। সপ্তাহ খানেক আগে মনিরার বাবা রাজ্জাক মোল্লা এবং তার জামাই জিরাদ আকন অন্যত্র মনিরার বিয়ে ঠিক করেন। বিয়ের কথা শুনে মনিরা পালিয়ে তার স্বামী নিপু আকনের নিকট ঢাকায় চলে যান। তাদের গোপন বিয়ের ঘটনা জানাজানি এবং মনিরা পালিয়ে ঢাকায় চলে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় মনিরার বাবা রাজ্জাক মোল্লা এবং ভগ্নিপতি জিরাদ আকন ও ভাগিনা আসিফ আকন।

এঘটনার জের ধরে শনিবার দুপুরে মনিরার ভগ্নিপতি জিরাদ এবং ভাগিনা আসিফ আকন বাঁশের লাঠি এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বৃদ্ধ হামেদ আকনের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে গালাগাল শুরু করেন এবং মনিরাকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলেন। এক পর্যায়ে তারা ঘরে প্রবেশ করে তার ষাটোর্ধ বৃদ্ধ বাবাকে ঘড় থেকে টেনে হেছরে বাইরে বের করে বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধরক মারধর করেন এবং ভাগিনা আসিফ আকন ওই বৃদ্ধকে জুতাপেটা করে গুরুতর আহত করেন। এসময় হামেদ আকনের বড় ছেলে সবুজ আকনের স্ত্রী তানিয়া বেগম শ্বশুরকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলে তাকে মারধর করে বাঁশের লাঠি দিয়ে তারিয়ে দেয়।

ওই ঘটনায় ভীত সন্ত্রস্তÍ ওই পরিবারবারটি প্রভাবশালী রাজ্জাক মোল্লা ও তার মেয়ের জামাই জিরাাদ আকন এবং তার ছেলে আসিফ আকনের ভয়ে আহত হামেদ আকনকে হাসপাতাল কিংবা অন্য কোথাও নিয়ে চিকিৎসা করাতে পর্যন্ত পারেনি। আজ রবিবার সকালে খবর পেয়ে প্রতিবেশী এবং হামেদ আকনের স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে আমতলী থানায় নিয়ে আসেন।

ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হলে এলাকায় নিন্দার ঝড় ওঠে। এবং স্থানীয় ও সুশিল সমাজ এ ঘটনার বিচার দাবী করেন। ভিডিওতে দেখা যায় অভিযুক্ত জিরাদ বাঁশের লাঠি নিয়ে বৃদ্ধ হামেদ আকনকে পিটাচ্ছেন এবং তার ছেলে আসিফ ওই বৃদ্ধের পিছনে দাঁড়িয়ে জুতা পেটা করছেন। এসময় হামেদ আকনের বড় ছেলের স্ত্রী তানিয়া বেগম শ্বশুরকে রক্ষার্থে এগিয়ে আসলে জিরাদ লাঠি নিয়ে তাকে ধাওয়া করেন।

প্রতিবেশী রিপন মৃধা বলেন, মধ্যযুগীয় কায়দায় ছেলে বিয়ে করার অপরাধে বৃদ্ধ হামেদ মৃধাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। এঘটনার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানাই।

আহত হামেদ আকন বলেন, ছেলে ভালোবেসে রাজ্জাক মোল্লার মেয়েকে বিয়ে করেছে বিয়ের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার ছেলের বিয়ে বিষয় তুলে রাজ্জাক মোল্লার সন্ত্রাসী জামাই জিরাদ এবং তার ছেলে আসিফ আমার বাড়িতে এসে ঘরে থেকে টেনে হিছড়ে আমাকে ঘরের বাইরে বের করে জুতাপেটা এবং বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। আমি ওদের ভয়ে চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারিনি।

হামেদ আকনের বড় ছেলের স্ত্রী তানিয়া বেগম বলেন, শ্বশুরকে মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে গেলে জিরাদ এবং তার ছেলে আসিফ আমাকেও মারধর করে তারিয়ে দেয়।

অভিযুক্ত জিরাদ মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার নাবালক শালীকে বিয়ে করেছে হামেদ আকনের ছেলে নিপু আকন তাকে খুজতে ওই বাড়ি গিয়েছিলাম।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান বলেন, এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।