বঙ্গবন্ধুর খুনীরা আজ কোথায়?


সহঃ অধ্যাপক গোলাম মোহাম্মদ আইয়ুব খান প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৪, ২০২২, ৭:৩৫ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
বঙ্গবন্ধুর খুনীরা আজ কোথায়?

 

 

নাবালক শিশু শেখ রাসেল চারদিকে ধ্বংস আর চিৎকার শুনে কেঁদে বলল, ”মায়ের কাছে যাব”। মায়ের কাছে পৌছে দেবার ছলনায় অমনি তাকেও গুলি করা হলো, কি পৈশাচিক উৎসব।

পাঠক! প্রশ্ন কি জাগে না? নাবালক রাসেল কি অপরাধ করেছিল? কেনই বা তাকে হত্যা করা হ’ল? অপরাধ করেনি বড় হয়ে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হয়ে অপরাধ করবে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নেবে। ওরে নরাধমপশু ! মহান স্রষ্টা তোদের উপর যে প্রতিশোধ নিয়েছে তার শতভাগের একভাগ প্রতিশোধ ও রাষ্ট্রপতি শেখ রাসেল নিতে পারতেন না, পারেননি সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। শেখ রাসেল হত্যার কাল্পনিক যৌক্তিকতা বুঝে নিলাম কিন্তু আজও বুঝতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর মৃত দেহটি নিয়ে যে পৈশাচিকতা।প্রতিদিনের হাজারো অতিথির জ্ঞাতার্থে সেই পৈশাচিকতার কিয়দংশ তুলে ধরা সংগত মনে করছি। বেগম মুজিব, তাঁর তিন পুত্র ও দু’পুত্রের নববধুর লাশ সহ ১৬টি লাশ কাফন ছাড়াই রক্তাক্ত অবস্থায় বনানীর গোরস্থানে দাফন করা হয়।

শেখ মুজিবের লাশ কোথায় সমাহিত করা হবে? ভাবনায় পড়ল নরপশুরা । ঢাকায় দাফন করলে জড় হয়ে মানুষ ক্ষেপে যাবে, গোটা বাঙ্গালী জাতির তীর্থ ক্ষেত্রে পরিনত হবে সমাধিস্থল। অবশেষে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার পোস্ট মাস্টার আলাউদ্দন হাওলাদারের নিকট টেলিফোন যোগে প্রথমে ১০টা, ৮টা পরে ১টা কবর খোঁড়ার নির্দেশ দেয়। লোক চক্ষুর অন্তরালে দু’জন অফিসার ও ১০/১২জন সৈনিক মৃত্যুর পরের দিন শনিবার দুপুর ২টা৩০মিনিটের সময় হেলিকপ্টার যোগে বঙ্গবন্ধুর লাশের কফিন নিয়ে আসেন টুঙ্গিপাড়া থানার মাঠে। সেখান থেকে প্রায় আধা মাইল দূরত্বে তার কফিন কাঁধে নিয়ে শেখ রজব আলী, আতিয়ার কাজী , বাবর শেখ, দর্জি মুন্সি, ইদ্দ্রিস কাজী, ইদ্দ্রিস শেখ , তোতা মিয়া মুন্সি , জীবন সরদার , নজির মোল্লা, জহুর মুন্সি ও আবদুল হাই বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে আসেন। কবর খুঁড়ছেন মোঃ ওমর আলী ফকিরের বাবা মফেল ফকির, আঃ রাজ্জাক মোল্লা ও আবুল কালাম মোল্লা । কফিন সহ লাশ দাফন করার কড়া নির্দেশ । ইমাম শেখ হালিম মৌলবী অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে বলেন , ”ইসলামে জানাযা ব্যতীত কোন মুসলিমের দাফন করা জায়েজ নেই। জানাযার পূর্ব শর্ত গোসল করানো ও কাফন পড়ানো”। একথা শুনে নির্দেশ উপেক্ষা করে আইয়ুব মিস্ত্রি ও তার বাবা হালিম মিস্ত্রি উভয়েই শাবল দিয়ে বাক্স খুলেন । ১০ মিনিট সময়- এ সময়ের মধ্যে দাফন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আব্দুল মান্নান শেখ , নুরুল হক , কেরামত কাজী, নজির মোল্লা , কাশেম কাজী ও ইমান কাজী ঠান্ডা পানি ও কাপড় কাচা সাবান (৫৭০সাবান) দিয়ে গোসল করালেন। গোসলের সময় তারা বঙ্গবন্ধুর বুক থেকে ২৪ টি গুলি উদ্ধার করেন । ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির উপরের ্অংশ ছিল না। গোসল শেষে শেখ সাহেরা খাতুন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে কর্মরত দিপালীর নিকট থেকে আনা দুটি লাল ও নীল পাড়ের রিলিফের শাড়ী কাপড় কাফন হিসাবে পড়ানো হয়। সোহরাব শেখ লোকমান শেখের বাঁশ ঝাড় থেকে বাঁশ কেটে আনেন। তড়িঘড়ি এবং কড়া পাহারায় এসব কাজ চলছে । বঙ্গবন্ধুর লাশ শেষ বারের মত এক নজর দেখার প্রবল ইচ্ছায় হাজার হাজার ভক্ত , স্বজন , বাল্যবন্ধু , চাচীরা ভীড় জমালেন। কিন্তু হায়! সে সুযোগটাও তাদের ভাগ্যে জোটেনি । বুক ফাটা আর্তনাদ, আহাজারি ও করুন চিৎকারে আকাশ- বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার জনতার উপস্থিতি কিন্তু তাদেরকে জানাযায় অংশ গ্রহন করতে দেয়া হয়নি। মাত্র ২০/২৫জন লোককে জানাযায় অংশ গ্রহনের সুযোগ দিয়েছে। যাদেরকে ওই দু’জন আর্মি অফিসার একটা চিঠি দেখালেন , যার নিচে খন্দকার মোস্তাক আহমেদ প্রেসিডেন্ট অব বাংলাদেশ লেখা ছিল । জানাযা পরিচালনা করেন বাড়ীর মসজিদের ইমাম শেখ হালিম মৌলবী। জানাযা শেষে বাবা- মায়ের কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয় ।

” চির অম্লান ভাবে ঘুমিয়ে আছে বাংলার রবি- চুপটি করে নিজ বাড়ী
তাঁর আদর্শের জ্যোতিতে সমুজ্জ্বল টুঙ্গিপাড়া- হাজারো মানুষ দেয় সেথায় পাড়ি।”

ওরে নরপশু! বঙ্গবন্ধুর জানাযাটা হয়েছে কিন্তু আমি নিশ্চিত তোদের জানাযাটা হয়নি। ইতিহাস সে সাক্ষ্যই দেয় । তোরা বঙ্গবন্ধুর নশ্বর দেহটি চাপা দিতে পেরেছ- পেরেছ কি তার পবিত্র মনের কৃতকর্ম, আদর্শ , বিশ্বজোড়া সুনাম- সুখ্যাতি চাপা দিতে? ইতিহাসের পরম শিক্ষা- ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। আব্রাহাম নিঙ্কনকে হত্যা করে যেমন দাস প্রথা ফিরিয়ে আনা যায়নি । নবাব সিরাজকে হত্যা করে কুখ্যাত মীর জাফরের স্বপ্ন যেমন বাস্তবায়িত হয়নি তেমনি ’৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনীরা পুনঃ পাকিস্তানের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি ।পারেনি ইতিহাস থেকে তাঁর নাম মুছে দিতে । হত্যা ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারে না । এটা ঐতিহাসিক সত্য । বঙ্গবন্ধুর পাতকী হত্যাকারীরাও তাকে ইতিহাসের মহা গৌরবের আসনচ্যুত করতে পারেনি। বরং তার নশ্বর দেহকে হত্যা করে তার অবিনশ্বর ব্যক্তিত্বকে চিরদিনের জন্য প্রতিষ্ঠা দান করেছে বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে । বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করেছে তাঁকে সূক্ষ- বিচারে মূল্যায়ন করতে। মূল্যায়নের নিরিখে দেশী ও বিদেশী গুনীজনের ভাবনা উপস্থাপন করছি। বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা আর নেতৃত্বের প্রতি প্রগার আস্থা সম্পর্কে তার রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রায়শই বলতেন “ মুজিবের মতো অতুলনীয় দক্ষ সংগঠক আমি একজনও পাইনি”। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি কারী, পাঁচ-ছয় বার দলবদলকারী তৎকালীন আইন মন্ত্রী মওদুদ আহমেদ “শেখ মুজিবের শাসনকাল” গ্রন্থে লিখেছিলেন- শেখ মুজিবের আবির্ভাব বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে সব চাইতে বড় ঘটনা। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়েই তার সমাধি রচিত হয়নি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শেখ মুজিবের চাইতে প্রজ্ঞাবান, দক্ষ, সুযোগ্য ও গতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অভ্যূদয় ঘটেছে বা ঘটবে; কিন্তু স্বাধীনতার সংগ্রাম ও জাতীয় পরিচিতি নির্ধারনে তার চাইতে বেশি অবদান রেখেছেন খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, “কারাবন্দী অবস্থায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে নিহত হলে শেখ মুজিব বাঙ্গালী জনমনে অমর হয়ে থাকতেন এবং বাঙ্গালী হৃদয়ে তার মূর্তি থেকে যেত অবিনশ্বর। তিনি বিবেচিত হতেন ইতিহাসের মহোত্তম শহীদ হিসেবে”। সত্যকে চাপিয়ে রাখা যায় না, সত্য বেরিয়ে আসবেই। তাইতো জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর কন্ঠে ধ্বনিত হয়- ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য । তিনি আপোষহীন ভাবে জেল-জুলুম নির্যাতন সহ্য করে বাংলাদেশে স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করেন। স্বাধীনতার পর ভারত ও রাশিয়ার মত উপেক্ষা করে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়ে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেন”। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর নোবেল বিজয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, ‘মুজিবকে হত্যার পর বাঙ্গালীদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যে বাঙ্গালী মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোন জঘন্য কাজ করতে পারে’। বিশ্বের প্রভাবশালী মিডিয়া বঙ্গবন্ধুকে বর্ননা করেন এভাবে, ‘তিনি এমন এক বিশাল ব্যক্তিত¦ যার সামনে সহসা মাথা নূয়ে আসে’। প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্যা গার্ডিয়ানের মতে, শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। দ্যা টাইমস অব লন্ডন ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়, ‘সব কিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সমসময়ই স্মরণ করা হবে। কারন তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। ফিনান্সিয়াল টাইমস বলেছে মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনই জন্ম নিত না। ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত অন্য এক প্রবন্ধে বলা হয় -শেখ মুজিবকে হত্যার ফলে বাংলাদেশ এমন একজন আকর্ষনীয় ব্যক্তিকে হারিয়েছে, যিনি তার ব্যক্তিতের প্রভাব খাটিয়ে দেশকে অখন্ড রাখার মত প্রয়োজনীয় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকার সংবাদ দাতা টমাস মুর ঢাকা থেকে পাঠানো এক সংবাদে জানান, ‘খন্দকার মোস্তাকের অধীনে যারা বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন হয়েছেন তারাই এখন নিহত শেখ মুজিবের রক্তের দাগ মুছতে গিয়ে লেডি ম্যাকবেথের (সেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’ নাটকের চরিত্র) দুঃস্বপ্নের দৃশ্য পুনরাভিনয় করছে বলে মনে হয়। ভারতীয় বেতার ’আকাশ বাণী’ ১৯৭৫ সালে ১৬ আগস্ট তাদের সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, ’যিশু মারা গেছেন। এখন লাখ লাখ লোক ক্রুস ধারণ করে তাকে স্মরণ করছে। মূলত একদিন মুজিবই হবেন যিশুর মত’। বিশ্ববিখ্যাত নেতা কিউবার জীবন্ত কীংবদন্তী ফিদেল ক্যাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেন। আলজিয়ার্সে ১৯৭৩ সালে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনকালে ফিদেল ক্যাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ’আমি হিমালয় দেখিনি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। তার ব্যক্তিত্ব ও নির্ভীকতা হিমালয়ের মতো’। ব্রিটিশ মানবতা বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক লর্ড ফেন্নার ব্রোকওয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ’নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, ভারতের মহাত্মা গান্ধী ও আয়ারল্যান্ডের জর্জ ডি, ভেলেরার চাইতেও মহান ও অনন্য। তিনিই একমাত্র নেতা যিনি একই সঙ্গে একটি স্বাধীন জাতি ও স্বাধীন ভূমির জনক”। বিবিসি টেলিভিশনের দূরপ্রাচ্য সংবাদদাতা ১৯৭৫ এর আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে লিখিত এক সংবাদ বিবরণীতে বলেন, “শেখ মুজিব সরকারিভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং জনসাধারণের হৃদয়ে উচ্চতম আসনে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হবেন । এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। এটা যখন ঘটবে, তখন নিঃসন্দেহে তার বুলেট বিক্ষত বাসগৃহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মারক চিহ্ন এবং তাঁর কবরস্থান পূণ্যতীর্থে পরিণত হবে” (দ্যা লিসনার, লন্ডন, ২৮ আগস্ট ১৯৭৫)” ওরে দূরাত্মা বেঈমান! কান পেতে শোন , চোখ খুলে দেখ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ৪ বার প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর নামে ৩১দিন শোক দিবস পালন করা হয় এবং বাংলাদেশের প্রতি মসজিদে তার জন্য দোয়া করা হয়। স্বাভাবিক মৃত্যু হলে তা হতনা। গত বছরে ’মুজিবশতবর্ষ’ পালিত হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর মাজার এখন প্রতিদিন হাজারো মানুষের জনপদ। গত ৩১শে জানুয়ারী’২১ রোজ শুক্রবার ৩য় বারের মত বঙ্গবন্ধুর মাজারে গিয়ে ছিলাম।সঙ্গে ছিল আমার বড় মেয়ে আয়শা তাসনিম তাকি (একাদশ শ্রেণি)। মাজারকে কেন্দ্র করে এলাকার ভৌত অবকাঠামোর সৌন্দর্য দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় ৪/৫শত গ্রামপুলিশের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করি। একজন মাওলানা মোনাজাত পরিচালনা করেন। মাজার কম্পউন্ডারের মধ্যে দুটো মসজিদ । হাজার হাজার মুসল্লির সাথে জুমার নামাজ শেষে বঙ্গবন্ধুর জন্য বিশেষ মোনাজাতে শরীক হয়েছি। বলা বাহুল্য, প্রতিদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অফিসার ও কর্মচারি শিক্ষা সফর হিসাবে মাজারটি বেছে নিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া করেন। নামাজ শেষে আমি এবং আমার মেয়েটি পাঠাগারে প্রবেশ করি। দেখলাম তথায় অনেক লোক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অধ্যায়ন করছেন। আমরাও অধ্যায়ন করলাম প্রায়দু’ঘন্টা। রেফারেন্স হিসাবে কয়েকটি বইয়ের নাম ডাইরিতে লিখলাম । লোভ সামলাতে পারেনি অবশেষে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান লিখিত ” বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন” বইটি কিনেছি । জোর কন্ঠে বলা যায় – এ ধারা অব্যাহত থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত । সম্প্রতি নির্মিত পদ্মা সেতু পাল তোলা নৌকায় প্রবল হাওয়া লাগার মত ইতি বাচক কাজ করবে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল উন্নত ও পূণ্য তীর্থভূমিতে পরিনত করতে। সঙ্গত কারনেই কবি অন্নদা সংকর রায় অত্যন্ত চমৎকার ভাবে তার লেখনিতে ভবিষ্যৎবানী করেছেন; ”
যতকাল রবে পদ¥া, মেঘনা, গৌরী, যমুনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবর রহমান।”

অন্নদা সংকর রায়ের ভবিষ্যদ্বানী আমাকে ঙ’ঐবহৎু’ র লেখা ঞযব সধহ যিড় ফড়বং হড়ঃ ফরব শীর্ষক গল্পটি মনে করিয়ে দেয়। এক লোক তার মহৎ প্রতিবেশীকে হত্যা করেছে। তার খ্যাতি ও নাম ধামে লোকটি ঈর্ষান্বিত ছিল । তাকে হত্যা করলেই সব নাম ধাম মুছে যাবে বলে লোকটি ভেবেছিল এবং তাই করল। কয়েক দিন পর সে দেখে শহরের কেন্দ্র স্থলে ঐ মহৎ পুরুষটির মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছে শহরবাসী। রোজ ঐ মূর্তিতে ফুলের মালা দেয় আবাল বৃদ্ধ বনিতা। একদিন ঐ হত্যাকারী দেখে তার স্ত্রী ও ঐ মূর্তির গলায় ফুলের মালা পরাচ্ছে। রাতে বাড়ী ফিরে ক্রোধান্ধ হত্যাকারী স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করল, ”তুমি কোথায় গিয়েছিলে”? স্ত্রী বলল,” দেবতার পায়ে ফুল দিতে ।” স্বামী বলল, ”এই লোকটা দেবতা নাকি, সে তো মানুষ”। স্ত্রী জানাল, ’তিনি আগে মানুষ ছিলেন , এখন দেবতা হয়ে গেছেন।’ ওরে নরাধম! ওহে ঘৃন্য হন্তারক! তোদের আতœপরিচয় নেই। ইতিহাসের পাতায় মীর জাফর হয়েই থাক। প্রসঙ্গত নিবন্ধের শিরোনামের প্রশ্নটি বারবার উঁকি দেয়। তোমাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিব কিংবা তোমাদের কবরের উপর থুথু ফেলব এজন্য নয়। জাতির জনক বিশ্ববন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আমার সাথে অসংখ্যপাঠক লেখক , রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিরা সরবে বা নীরবে শিরোনামের প্রশ্নটি নিয়মিতই করে থাকেন,” বঙ্গবন্ধুর খুনীরা আজ কোথায়?”

লেখক, কলামিস্ট, কলাগাছিয়া এস, এম, সেকান্দার আলী চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ, গলাচিপা, পটুয়াখালী।


আর্কাইভ