২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সুস্থতার মাপকাঠি কেবল শারিরীকভাবে নিরোগ থাকা নয়

স্টাফ রিপোর্টার , প্রকাশিত হয়েছে-

 

সুস্থতার মাপকাঠি কেবল শারিরীকভাবে নিরোগ থাকা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তিতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং শারীরিক, মানসিক, পরিবেশ এবং সামাজিক মানদ- বজায় রাখাটাও জরুরী। কিন্তু স্বাস্থ্য রক্ষায় চিকিংসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে’ এই একটি গতানুগতিক ধারার মধ্যেই আমরা আবদ্ধ হয়ে আছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

আজ ১২ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) সকাল ১১ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের কৈবর্ত সভাকক্ষে আয়োজিত “প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক জনাব সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য। উক্ত অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডক্টরস ফর হেল্থ এন্ড এনভাইরনমেন্ট এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবু সাইদ, পথিকৃত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা: লিয়াকত আলী, পাবলিক হেল্থ স্পেশালিষ্ট ডা: আবু জামিল ফয়সাল এবং ৭১ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. খালেদ শওকত আলী।

মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনায় মিঠুন বৈদ্য বলেন, ভবিষ্যত স্বাস্থ্যঝুকি মোকাবেলায় প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বরাদ্দ রাখা। তামাক ও কোমল পানীয়সহ সকল প্রকার স্বাস্থ্যহানীকর পণ্যের উপর উত্তোরত্তর কর বৃদ্ধির পাশাপাশি সারচার্জ আরোপ এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে সকল মন্ত্রনালয়ের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। এছাড়া, কমিউনিটি স্বাস্থ্য উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম ও প্রচারণা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

ডা. খালেদ শওকত আলী বলেন, স্বাস্থ্যখাতে সরকারের ইতিবাচক অর্জন রয়েছে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করা। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ৪ টি মূলনীতির সাথে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে যুক্ত করা প্রয়োজন যেন দেশের জনগনকে স্মার্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়। চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও সমান গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অধিক প্রাধান্য দিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।

ডা: আবু জামিল ফয়সাল বলেন, বর্তমানে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেকাংশেই চিকিৎসা নির্ভর। কিন্তু সু-স্বাস্থ্য গড়ে তুলতে কেবলমাত্র চিকিৎসা নির্ভর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই সমাধান নয়। স্থানীয় সরকারকে সাথে নিয়ে স্বাস্থ্য উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের বাজেটও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সেই সাথে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রনালয় সমন্বিতভাবে কার্যক্রম গ্রহন করতে পারে। কেবলমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

ডা: লিয়াকত আলী বলেন, সরকার স্বাস্থ্যখাতে এসডিজি এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হলেও ২০৩০ সাল পর্যন্ত সরকারের এই অর্জনের ধারাকে অব্যাহত রাখতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গুরুত্বারোপ করতে হবে। কারন উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি স্বাস্থ্য খাতের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। প্রতিনিয়ত ব্যয় বৃদ্ধির দরুন দেশের প্রান্তিক জনগনের পক্ষে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করা প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়ছে।

অধ্যাপক ডা. আবু সাইদ বলেন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বিষদ আকারে গবেষণা। গবেষণার আলোকে ক্ষেত্রবিশেষে গ্ররুত্ব প্রদান করে কার্যক্রম গ্রহন করতে হবে। সেই সাথে শিশুদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শরীরচর্চা ও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করতে হবে। পরিশেষে তিনি স্বাস্থ্যখাতে সমতা আনয়ন এবং জনগনের স্বাস্থ্য ব্যয় কমিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে জনাব সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জনস্বাস্থ্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রনালয়ের সমন্মিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের মত বিশাল বিষয় নিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। তাই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনগুলোকেও বিভিন্নধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখতে হবে।

 

SK24/NASIM/NABID/DSEX