আমতলীতে সুকুমার হালদারের বাড়িটি এখন পাখির স্বর্গরাজ্যে পরিনত


হায়াতুজ্জামান মিরাজ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি প্রকাশের সময় : মার্চ ৫, ২০২৩, ৫:৪৩ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
আমতলীতে সুকুমার হালদারের বাড়িটি এখন পাখির স্বর্গরাজ্যে পরিনত
dig

 

 

বরগুনার আমতলী পৌরশহরের মফিজ উদ্দিন বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সবুজছায়া ঘেরা সুকুমার হালদারের বাড়িটি অবস্থিত। প্রতিদিন দিন ও রাতে ওই বাড়িটি বকের ক্রাক …ক্রাক, পানকৌড়ির খট…খট, চড়ুই, শালিক আর বাদুরের কিচির মিচির শব্দে মুখরিত থাকে।

পাখির প্রতি সুকুমার হালদারের ভালোবাসাও অনেক। নিজের পুকুরের মাছ খেতে দেন পাখিদের। সুকুমারের ভালোবাসায় ওই বাড়ির পাখিদের শিকার কিংবা কেউ জ্বালাতন করতে পারে না। ওই বাড়িটি এখন সকলের কাছে পাখি প্রেমি বাড়ি হিসেবে পরিচিত। পাখিরাও এখন নির্ভয়ে বসবাস করে ওই বাড়িতে। বাড়িটি এখন পাখিদের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে।

জানা গেছে, প্রায় এক যুগ পূর্বে ২০১০ সালে প্রথমে সুকুমার হাওলাদারের বাড়িতে কয়েকটি বাদুর এসে বসবাস শুরু করে। এক বছরের মাথায় তা প্রায় কয়েক হাজার বাদুরের বাড়িতে পরিনত হয়। এরপর আসতে থাকে বক আর পান কৌড়ি। বাড়ির পেছনের উঁচু রেন্ট্রি, বাদাম, কড়াই আর চাম্বল গাছে হাজার হাজার বাদুরের সাথে শত-শত বক আর পান কৌড়িতে ভরে যায়। পাখির প্রতি সুকুমার সরকারের ভালোবাসা আর নির্ভরতা পেয়ে প্রতি বছর বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা। প্রতি বছর শীত মৌসুমের শুরুতে পানকৌড়ি আর বক এসে ওই বাড়ির গাছে বাসা করে ডিম দিয়ে ছা ফোটায়। পানকৌড়ি এবং বক ছা ফোঁটানোর পরে বাচ্চাদের খবারের সংকট দেখা দেয়। ওই সংকট মোকাবেলার জন্য সুকুমার তার বাড়ির পেছনের পুকুরটি মাছ চাষ করে তা নিজেরা না খেয়ে পাখিদের জন্য উমুক্ত করে রেখেছেন। ফলে দল বেঁধে পান কৌড়ি এবং বকের দল এই পুকুরে নেমে মাছ শিকার করে তা বচ্চাদের নিয়ে খাওয়ান। প্রতি বছর আগস্ট পর্যন্ত চলে ওই বাড়িতে পাখির মেলা। বাচ্চা বড় করে পানকৌড়ি আর বক চলে গেলেও বাদুর , শালিক ও চড়ুই থাকে বারো মাসdi

রবিবার সকালে সরেজমিন সুকুমার হালদারের বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল বাড়ির পিছনের অংশে বড় বড় প্রজাতির উঁচু রেন্টি কড়াই আর চাম্বল গাছে ভরা। সকল গাছেই ঝুলছে বাদুর। তারা যেন সার্বক্ষনিক কিচির মিচির শব্দ করে বেরাচ্ছেন। রেন্টি গাছের উঁচু মগ ডালে শারি শারি বক আর পান কৌরির বাসা। অনেক বাসায় বকের বাচ্চা ফুটেছে। কিছু কিছু বাসায় মা বক আর পানকৌড়ি ডিমে তা দিতে দেখা গেছে। গাছের নীচের অংশ মাটিতে বাদুরের মলে ভরে গেছে। বকের সাদা বিষ্টায় গাছের সকল পাতা সাদা রং ধারন করেছে। মা বক আর পানকৌরি কিছুক্ষন পর-পর উড়ে যাচ্ছে তার প্রিয় সন্তানদের জন্য খবারের সন্ধানে। কখনো বা সুকুমার হাওলাদার পুকুরে আবার কখনো বা পাশের লেকে পানকৌড়ি সাঁতার কেটে আর বকগুলো কিনার থেকে মাছ ধরে এনে তাদের ছানাদের মুখে তুলে দিচ্ছেন। এ এক অভাবনীয় দৃশ্য। মায়ের ভালোবাসার খাবার পেয়ে কিছুক্ষণ নিরব থাকলেও আবার কিচির মিচির করে ডেকে উঠছেন খাবারের জন্য।

বাড়ির মালিক সুকুমার হাওলাদার বলেন, ২০১২ সাল থেকে আমাদের বাড়ির মধ্যে উচু ও বড় বড় গাছের মগডালে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আশ্রয় নিতে শুরু করে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তারা নিয়মিত বসবাস করে আসছে। বাড়ির সকলে এখন পাখির প্রেমে পড়ে গেছে। সবাই পাখিকে ভালোবাসে। পাখির কষ্টে সবাই ব্যাথিত হয়। বাড়িতে পাখি শিকার কিংবা পাখি জ্বালাতন সবার জন্য নিষিদ্ধ।

তিনি আরো বলেন, আমাদের বাড়ির একটি পুকুরে মাছ চাষ করে আমরা না খেয়ে তা পাখির খাবারের জন্য উম্মুক্ত করে রেখেছি। যখন যে পাখির খাবারের প্রয়োজন তখন সে পাখি ওই পুকুর থেকে খাবার ধরে খেয়ে থাকেন। পাখির আশ্রয়স্থল রক্ষা করা ও বসবাসের কথা চিন্তা করে অনেক পুরাতন বড় বড় গাছ কাউকে কাটতে দেই না। পাখির ছানা নীচে পড়ে গেলে তা বাসায় এনে লালন পালন করে বড় করে সুস্থ্য হওয়ার পর আবার তা বাগানে ছেড়ে দেই।

প্রতিবেশী কার্তিক মন্ডল জানান, সুকুমার হালদার তার বাড়িতে পাখির জন্য অভায়াশ্রম গড়ে তুলেছেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো ও মহৎ কাজ। পাখির প্রতি তার ভালোবাসা দেখে আমরাও তার ওই কাজে সহযোগিতা করি। ওই বাড়িতে এসে কেউ পাখি শিকার কিংবা জ্বালাতন করতে পারে না। আমরা সকলে মিলে বাঁধা দেই। আমরাও সুকুমার হাওলাদারের মত পাখির প্রেমে পরে গেছি।

আরেক প্রতিবেশী গৌতম ঠাকুর বলেন, পাখির প্রতি সুকুমার হালদারের ভালোবাসা দেখে আমরাও মুগ্ধ। সুকুমারের বাড়িসহ আশপাশের আমাদের বাড়ির গাছপালাও এখন পাখির অভায় আশ্রমে পরিণত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আ.ন.ম আমিনুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, বক ও পানকৌড়ি দল বেঁধে এক সাথে উঁচু গাছের মগডালে বসবাস করে। বাংলাদেশে ১৮ প্রজাতির বক রয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল অ লে সাধারনত বড় সাদা বক দেখা যায়। এরা সারা বছর ডিম দেয় এবং বাচ্চা ফোটায়। এরা সাধারনত ৩ থেকে ৬ টি ডিম দেয়। ২০ থেকে ২৬ দিনের মধ্যে বাচ্চা ফোটায়। পুরুষ এবং স্ত্রী বক মিলে ডিমে তা দেয় এবং বাচ্চা লালন পালন করে। বাচ্চা ফোটার পর ২ থেকে ৩ সপ্তাহ বাচ্চা বাসায় হাটাহাটি করে। ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে তারা উড়ে যেতে সক্ষম হয়। বক সাধারনত ৯ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এদের প্রধান খাবার হচ্ছে মাছ, পোকা মাকর। বাংলাদেশে ৩ প্রকারের পাণকৌরি দেখা যায়। এরমধ্যে আকারে ছোট পানকৌড়ি দক্ষিনা লে বেশী বসবাস করে। এরা সাধরনত বকের সাথে দল বেঁধে একত্রে উচু গাছের মগডালে বাসা বাধে। এরা সাধারনত ২ ও ৬ টি পর্যন্ত ডিম দেয়। ১৫ ও ২১ দিনের মধ্যে ডিম ফোটায়। পুরুষ এবং স্ত্রী পানকৌরি পালা করে ডিমে তা দেয় এবং বাচ্চা লালন পালন করে। ৩০ দিনের মধ্যে বাচ্চা বড় হয়ে উড়ে যেতে সক্ষম হয়। এদের প্রধান খাবার হচ্ছে মাছ ব্যাঙ। পানকৌরি ৮ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তিনি আরো বলেন, যেখানে মানুষ জ্বালাতন করে না সেখানে পানকৌড়ি, বক এবং বাদুর থাকতে পছন্দ করে।

 

SK24/SMK/DESK


আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১