১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আশ্রয়ণের ঘর পাচ্ছেন ১৩৪ গৃহহীন

নিজস্ব সংবাদদাতা , প্রকাশিত হয়েছে-

 

সরকার সারাদেশে ঘর করে দিচ্ছে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের । এবার গৃহহীনমুক্ত হতে যাচ্ছে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা। ‘আশ্রয়ণের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘ক শ্রেণি’ভুক্ত একেবারেই ভূমিহীন ও গৃহহীন ১৪০৪ টি পরিবারকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১ম, ২য় ও ৩য় পর্যায়ে মোট ১২৪৩টি গৃহহীন পরিবারকে ঘরের সনদপত্র ও দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। ৪র্থ পর্যায়ে আরও ১৩৪টি ঘর আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। এরপর বাকি ২৭টি পরিবারকে ঘর প্রদানের মধ্যদিয়ে এই উপজেলাকে শতভাগ গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

গলাচিপা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভূমিহীন ও স্বামী পরিত্যাক্তা মুজাহিদা বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। অপ্রাপ্ত বয়স্ক দুই সন্তান নিয়ে একটি ঝুপড়ি ঘরে ভাড়া থাকেন তিনি। তবে এবার তাদের নিজের ঘর না থাকার দুঃখ ঘুচতে যাচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া ব্রিজ বাজার এলাকায় তার জন্য জমিসহ আধাপাকা ঘর তৈরি হচ্ছে। দুটি কক্ষ ছাড়াও সেই ঘরের সামনে থাকছে বারান্দা, পেছনে রান্নাঘর, টয়লেট, ছোট আরেকটি জায়গা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে উপজেলা যৌথ কমিটির সভায় নদীভাঙন, বিভিন্ন দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে নতুন কোনো গৃহহীন তৈরি না হলে মোট ১৪০৪ জনকে পুনর্বাসন করার মধ্য দিয়ে উপজেলাকে গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় পটুয়াখালী-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষক ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নে উপজেলায় ২ শতাংশ করে খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক প্রান্তিক গৃহহীন পরিবারকে একক গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে। আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের সুপেয় খাবার পানি ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের সরাসরি তত্ববধানে একক গৃহ নির্মাণ ও পরিকল্পনা সংক্রান্ত ম্যানুয়াল অনুসারে প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

১৮ মার্চ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেলো, সেখানে নতুন নির্মাণ করা সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা আধাপাকা ঘরগুলোতে রং লাগানোর কাজ চলছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, তারা উদ্বোধনের আগেই নির্মাণ কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন।

একজন উপকারভোগী আবু সাঈদ বলেন, জীবনে ভাবছি না কোনো দিন নিজের বাড়ি আর ঘর অইব। বাড়িঘর পামু, আমরা খুব আনন্দ পাইছি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের সমন্বয়ে এই কাজ চলছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে দেশে দুই ধরনের মানুষকে ঘর করে দেবে সরকার। প্রথমত, যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন। আরেক ধরনের মানুষ আছেন, যাঁদের ১ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত জমি আছে, কিন্তু ঘর নেই কিংবা থাকলেও একেবারে জরাজীর্ণ।

গত বছরের জুন পর্যন্ত এই দুই ধরনের মানুষের তালিকাও করা হয়েছে। গলাচিপার মতো সারা দেশে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আধা পাকা ঘর দিচ্ছে সরকার। সব মিলিয়ে মুজিব বর্ষে ৩টি পর্যায়ে মোট ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ১২৯ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর দিচ্ছে সরকার।

স্থানীয় সংসদ সদস্য বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। একসঙ্গে এত ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর করে দেওয়ার ঘটনা বিরল।

গলাচিপা উপজেলার ইউএনও মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও স্কাউট-সদস্যসহ স্থানীয় মানুষদের মাধ্যমে যাচাই করে সুবিধাভোগী ঠিক করা হয়েছে। গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর এই মহা কর্মযজ্ঞে অংশীজন হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই মহাযজ্ঞ সম্পাদনে শামিল হয়েছে তাদের প্রতি রইলো অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।