যুদ্ধের পর নদী ভাঙ্গনে সর্বশান্ত মুক্তিযোদ্ধা

মোতালেবের মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম


সঞ্জিব দাস, গলাচিপা প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২, ২০২৩, ৯:৫২ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
মোতালেবের মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম

 

পটুয়াখালীর গলাচিপায় মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম দেখে যেতে চান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন রনাঙ্গনে জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা এক অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব হোসেন।

মুক্তিযুদ্ধে তিনি ভোলার ৮ নম্বর সেক্টরে বাবুর্চি হিসেবে কাজ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতেন। ভোলা জেলার দৌলতখান থানার মেদুয়া বৈকন্ঠপুর গ্রামের আবদুল আলীর ছেলে মোতালেব হোসেন মহান মুক্তিযুদ্ধে সফল একজন যোদ্ধা হিসেবে বিজয়ী হলেও আজ তিনি জীবন যুদ্ধে এক পরাজিত সৈনিক।

মোতালেব যুদ্ধের পর নদী ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হয়ে তিনি তার পরিবার নিয়ে তার মেয়ে জামাইয়ের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের কোকাইতবক গ্রামে এসে আশ্রয় নেন। দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার জীবন সংসার। মেয়ের বাড়িতেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পার হলেও আজ তার নাম ওঠেনি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়। অথচ তার সাথে যারা ওই সেক্টরে ছিলেন (শাহজালাল চৌকিদার, বাবুর্চি ইদ্রিস, যোদ্ধা ইলিয়াস মাঝি, যোদ্ধা কাসেম সরদার, যোদ্ধা খোরশেদ আলম, কমান্ডার নাইমুল হক, যোদ্ধা মিলন মিয়া) সবার নাম তালিকায় এসেছে।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব হোসেন বলেন, ভোলার ৮ নম্বর সেক্টরে বাবুর্চি হিসেবে কাজ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করে যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। যুদ্ধের পরে আমার বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। আমার দুটি কন্যা সন্তান নিয়ে আজও বেঁচে আছি। মুক্তিযুদ্ধের সকল ধরণের কাগজ আমার কাছে থাকলেও তালিকায় আমার নাম আজও ওঠেনি। যার কাছে যাই সেই অপরাগতা প্রকাশ করে অন্য কারো কাছে পাঠিয়ে দেয়। আমার জায়গা সম্পত্তি হারিয়ে মেয়ে জামাই বাড়িতে থাকি। একটি মাদ্রাসার জন্য বাড়ি বাড়ি চাল উঠিয়ে কিছু মাদ্রাসায় দেই সেখান থেকে কিছু আমাকে দেয়। এভাবেই চলে আমার সংসার। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও আজ পর্যন্ত কোন সরকারি সহায়তা আমি পাই নাই। মৃত্যুর আগে আমার একটাই আশা মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম দেখে যেতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অনেক কিছুই করে দিচ্ছেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় আমার নাম ওঠালে হয়ত সরকারি সহায়তা পেয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে পারতাম।

এ বিষয়ে পানপট্টি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাসুদ রানা বলেন, আসলেই মোতালেব হোসেন একজন অসহায় গরিব মানুষ। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলে তার নাম অবশ্যই তালিকায় থাকা দরকার। এর জন্য আমি সবার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।


আর্কাইভ