খুলনাঞ্চলে ট্রাইকো কম্পোষ্ট সারের ব্যবহার এবং মালচিং পদ্ধিতে সবজি চাষে সাফল্য


এ,লতিফ মোড়ল, খুলনা প্রতিনিধি প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১০, ২০২৩, ৮:১৯ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
খুলনাঞ্চলে ট্রাইকো কম্পোষ্ট সারের ব্যবহার এবং মালচিং পদ্ধিতে সবজি চাষে সাফল্য

কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তারই অংশ হিসেবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্হা  নবলোক খুলনার ডুমুরিয়ার চুকনগর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বিত কৃষি ইউনিটের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে এবং পিকেএসএফ’র আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ডুমুরিয়া ও কেশবপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে কৃষি ও মৎস্য খাত উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
রাসায়নিক সারের পরিবর্তে  উৎপাদিত ট্রাইকো- কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করে এবং কৃষি উদ্যোক্তা পর্যায়ে চাষীরা মালচিং পদ্ধতিতে বিষ মুক্ত সবজি চাষ করে লাভবান এবং উপকৃত হচ্ছেন।

আজ সোমবার সরেজমিনে ঘুরে  সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নবলোক,খুলনার সমন্বিত কৃষি ইউনিটের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে  কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ খাতে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কম খরচে  চাষীদের বেশি লাভবান করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছে। ট্রাইকো-কম্পোষ্ট সার উৎপাদন, কীটনাশকের বিষমুক্ত এবং রাসায়ানিক সারের পরিবর্তে জৈবসার দিয়ে সবজি উৎপাদন,চাষীদের উৎপাদিত সবজি বিক্রির জন্যে বিক্রয় কেন্দ্রও খোলা হয়েছে।

কম্পোষ্ট সার উৎপাদনের উদ্যোক্তা কেশবপুরের কাশিমপুর গ্রামের কাজী হুমায়ুন জানান,প্রায় ১০বছর আগে থেকে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাড়ির পাশে কেঁচো কম্পোষ্ট সার উৎপাদন করে আসছিলেন।

গত তিন মাস ধরে নবোলোকের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় প্রথম পর্যায়ে তিনি ১০ টি পাকা চেম্বার তৈরী করে গোবর,সরিষার খৈল,চা এর ডাস্ট,নিমপাতা,মেহগিনি পাতা ও বিভিন্ন ফলসহ ১৮ প্রকার উপাদানের মিশ্রণে ট্রাইকো-কম্পোষ্ট সার উৎপাদন শুরু করেছেন।
তিনি আরো বলেন, এই প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সারের ব্যাপারে এলাকার কৃষকদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি নবলোক এর সমন্বিত কৃষি ইউনিটকে এই প্রযুক্তি ব্যাপক ভাবে সম্প্রসারন করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে তাকে কম্পোষ্ট সার উৎপাদনে সার্বিক সহযোগীতার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

অপরদিকে, প্রকল্পের আওতায় মানচিং পেপার পদ্ধতিতে বিষমুক্ত ও রাসায়ানিক সারের পরিবর্তে জৈবসার দিয়ে সবজি উৎপাদন কারী নরনিয়া গ্রামের সবজি চাষী মোঃ জাহাঙ্গীর বলেন, এতদিন যাবৎ আমি গতানুগতিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে আসছিলাম।  নবলোকের সহায়তায় এবার আমি মানচিং পেপার পদ্ধতিতে ১০ কাঠা জমিতে শশা ও চিচিঙ্গা চাষ করেছি। এলাকায় সম্পূর্ণ নতুন এই পদ্ধতিতে আমিই প্রথম এবার সবজি চাষাবাদ করছি।

তিনি আরো বলেন, এতে উৎপাদন খরচ কম লাগছে অপর দিকে বিষ ও রাসায়ানিক সার মুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদিত হওয়ায় ভোক্তাদের কাছে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মঙ্গলকোট গ্রামের ক্ষীরাই চাষী আলী রেজা রাজু জানান, নবলোকের সহায়তায় গত ৪৫ দিন পূর্বে তিনি ১২ শতাংশ জমিতে মানচিং পেপার পদ্ধতিতে খুব কম খরচে ক্ষীরাই চাষ করে প্রায় ১০মন ক্ষীরাই পেয়েছেন। প্রতি কেজি গড়ে ৫০ টাকা দর হিসেবে ২০ হাজার টাকার ক্ষীরাই তিনি বিক্রি করেছেন।

এ ব্যাপারে নবলোক পরিষদের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, ট্রাইকো-কম্পোষ্ট হলো এক ধরনের জৈব সার, যার মূল উপাদান ট্রাইকোডার্মা নামক এক ধরনের উপকারি ছত্রাক। বিভিন্ন জৈব উপাদানের সাথে এই অনুজীব মিশিয়ে সার তৈরী করা হয়। আর ট্রাইকো-কম্পোষ্ট সার তৈরীর সময় পাকা চেম্বার থেকে নির্গত তরল নির্যাসকে ট্রাইকো লিচেট বলে।তিনি আরও বলেন, ট্রাইকো-কম্পোষ্ট সার ব্যবহারে কৃষক দুইভাবে লাভবান হচ্ছেন। প্রথমত এই সার জমিতে ব্যবহারের ফলে মাটির গঠন ও বুনট উন্নত করে পানি ধারন ক্ষমতা বাড়ায়, পানির অপচয় রোধ করে, মাটির অম্লত্ব ও লবনাক্ততা নিয়ন্ত্রন করে এবং মাটির সহনশীলতা বৃদ্ধি করে। এক কথায় মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে, সর্বপরি পরিবেশের ভারসম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ফলে ফসলের গুনগত মান ও ফলন বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে ট্রাইকো লিচেট জৈব বালাইনাশক হিসেবে ব্যবহার করে ফসলের রোগবালাই দমন করা যায়। ফলে কৃষককে ফসলের রোগবালাই দমনে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছেনা।

মানচিং পেপার পদ্ধতিতে সবজি চাষ বিষয়ে তিনি জানান,পলিথিন দিয়ে সবজি বেড তৈরীর কারণে কম পরিমান সেচ ও সার ব্যবহার এবং আগাছা মুক্ত রেখে সবজি চাষ করা যায়। পোকামাকড় দমন করে ফসল রক্ষা করতে কীটনাশকের বিষের পরিবর্তে সেক্স ফেরোমেন বা ফেরোমেন লিড সহ নীল ও হলুদ ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।ফলে সবজি চাষাবাদে একদিকে যেমন খরচ কম হয়,অপর দিকে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা যায়।

SK24/SMK/DESK


আর্কাইভ