তওবার ধারা অব্যাহত থাকবে যে পর্যন্ত না পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে


ইসলাম ডেস্ক প্রকাশের সময় : মে ১৮, ২০২৩, ৩:৪৮ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
তওবার ধারা অব্যাহত থাকবে যে পর্যন্ত না পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে

আল্লাহ তাআলা রাতে তার হাত প্রসারিত করেন যেন দিনের অপরাধীরা তওবা করে এবং দিনে তার হাত প্রসারিত করেন যেন রাতের অপরাধীরা তওবা করে। তওবা করার এ ধারা অব্যাহত থাকবে যে পর্যন্ত না পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করেছেন।

বেশি বেশি তওবা ইসতেগফার করার ব্যাপারে কোরআন-সুন্নায় বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কেননা গুনাহমুক্ত জীবনের অন্যতম উপায় হচ্ছে তওবা ও ইসতেগফার করা। আল্লাহ তাআলার ঘোষণাও এমন-

وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا

‘যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১০)

তওবা কবুল

আল্লাহ তাআলা দেরিতে হলেও বান্দার তওবা কবুল করেন। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে ঘোষণা করেন-

হজরত আবু মুসা আব্দুল্লাহ বিন কায়স আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

إنَّ الله تعالى يَبْسُطُ يدَه بالليلِ ليتوبَ مسيءُ النَّهارِ، ويَبْسُطُ يدَه بالنَّهارِ ليتوبَ مسيءُ الليلِ، حتى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তার হাত রাতে প্রসারিত করেন যেন দিনের অপরাধীরা তওবা করে। আর দিনে তার হাত প্রসারিত করেন যেন রাতের অপরাধীরা তওবা করে। (আর এমনটি চলতে থাকবে সে সময় পর্যন্ত) যে পর্যন্ত না পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে।’ (মুসলিম)

আল্লাহর কাছে তওবা করার এবং ক্ষমা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদিস এটি। এ হাদিসটি বার বার মানুষকে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তওবা করার অনুপ্রেরণা দেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা মানুষের তওবা কবুল করেন, যদিও দেরি হয়। যখন কোনো মানুষ দিনে পাপ করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন যদিও সে রাতে তওবা করে।

আবার এভাবে মানুষ যখন রাতে পাপ করে আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবুল করেন যদিও সে দিনের বেলায় তওবা করে। যে পর্যন্ত না পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে। আর সেটা হচ্ছে কিয়ামতের বড় আলামত।

তওবার নিয়ম ও ক্ষমা

أَستَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’

অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

নিয়ম: প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন।’ (মিশকাত)

أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ: ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘

অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

নিয়ম: এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তওবা ও ইসতেগফার করতেন।’ (বুখারি)

رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ: রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।

অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তওবা কবুলকারী করুণাময়।’

নিয়ম: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ: আস্‌তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।

অর্থ: ‘আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তওবা করে) ফিরে আসি।’

নিয়ম: দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তওবা-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তওবা-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

> সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’

নিয়ম: সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, গুনাহ করার সময়ের কথা না ভেবে আর দেরি না করে আল্লাহর কাছে তওবা করা। দেরি হয়ে গেলেও আল্লাহর কাছে তওবা করে গুনাহ থেকে ফিরে আসা। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা। গুনাহমুক্ত জীবন গড়া। তবেই তওবাকারী হবেন সফল। যেভাবে বলেছেন আল্লাহ-

وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করযাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।‘ (সুরা নুর : আয়াত ৩১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যে কোনো ছোট-বড় ভুলে দ্রুত তওবা করার তাওফিক দান করুন। দেরি হয়ে গেলেও তওবা করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।

SK24/SMK/DESK


আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১