শিক্ষার্থী সংকটে বন্ধ হতে পরে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়


ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি। প্রকাশের সময় : মে ১৮, ২০২৩, ৩:৫৮ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
শিক্ষার্থী সংকটে বন্ধ হতে পরে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়

 

খান মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন

নুরানী ও হাফেজী মাদরাসার প্রভাবে শিক্ষার্থী সংকটে বন্ধ হয়ে যেতে পারে প্রত্যন্ত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়। এমনই আশংকার কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে মফস্বল এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। কোভিড-১৯ পরবর্তীতে কওমী ও নুরানী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সংখ্যাধিক্য এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-ছাত্রী সংকটের কারনেই এ ভাবনা।
সম্প্রতি পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদরাসার সংযুক্ত ইবতেদায়ী শাখার শিক্ষার্থী সংকটের কারন খতিয়ে দেখতে গিয়েই এমন তথ্য পাওয়া গেছে। পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে গত দেড় বছরে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে শতাধিক মাদরাসা। উপজেলার শুধুমাত্র চাড়াখালী চৌরাস্তায়ই ২০০ গজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৬টি মাদরাসা। এ মাদরাসাগুলোর সবই নূরানী এবং হাফেজী মাদরাসা। হঠাৎ এলাকায় এতগুলো মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলিয়া মাদরাসার ইবতেদায়ী শাখায়। জানা গেছে, উপজেলায় ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৮টি আলিয়া মাদরাসা রয়েছে। এ দুধরনের প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী কমে গেছে। কার হিসাবে জানা গেছে করোনার দীর্ঘ বন্ধের পর ২০২১ সালের জুলাই মাসে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলিয়া মাদরাসা খুললেও অনেক ছাত্র ছাত্রী এখনও প্রতিষ্ঠানে আসেনি। তারা অনেকেই এই বন্ধের ফাকে বসে না থেকে নুরানী এরবং হাফেজী মাদরাসায় ভর্তি হয়েছে। পরবর্তীতে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। মফস্বল এলাকার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে ইতোমধ্যে ৫০ এর নীচে নেমে গেছে।
এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হলে সরকারী নির্দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলিয়া মাদরাসাগুলোর শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। পক্ষান্তরে কওমী, নূরানী এবং হাফেজী মাদরাসাগুলোর উপর সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রন না থাকায় তা খোলা ছিল। তখন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বাড়িতে বসিয়ে না রেখে আরবী শেখানোর জন্য এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে। অবশ্য করোনা সময়ে এবং পরবর্তীতে ধর্মীয় অনুভূতি এর আরও একটা বড় কারন বলে জানা গেছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী বৃদ্ধি পাওয়ার সুবাদে যত্রতত্র এ প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে।
সরজমিনে উপজেলার চাড়াখালী চৌরাস্তায় গিয়ে দেখা য়ায় খাতুনে জান্নাত মহিলা মাদরাসা ও হিফজখানা, মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদরাসা, তাহফিজুল কুরআন মাদরাসা, খাদিজাতুল কুবরা (রা) মহিলা মাদরাসা, তাহফীমুল কোরআন হাফেজিয়া নূরানী মাদরাসা এবং ফাতিমাতুজ জোহরা নূরানী মাদরাসা নামে ৬টি মাদরাসা চলমান আােছ। আশে পাশে এক কিলোমিটারের মধ্যে আরো রয়েছে চাড়াখালী শিকদারবাড়ী হাফেজিয়া মাদারাসা, উপজেলার মোড়ে দারুস সুন্নাহ নূরানী হাফেজিয়া মডেল মাদরাসা এবং টিএন্ডটির পাশে মুসলিহুল উম্মাহ নুরানি ও হিফজ মাদরাসা। সব মিলিয়ে উপজেলায় শতাধিক নতুন মাদরাসা গড়ে উঠেছে। এসব মাদরাসার ছাত্র সংখ্যা এক থেকে দুই শতাধিক। শিক্ষার্থীদের বেতন, যাকাত, ফিতরা এবং এলাকাবাসীর অনুদানে এসব প্রতিষ্ঠান চলছে।

সদ্য প্রতিষ্ঠিত এসব নূরানী এবং হাফেজী মাদরাসার ৯০ শতাংশই আবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভাড়া বাড়ীতে। এদের নিজস্ব কোন ভবন নাই, নাই খেলার মাঠও। ভবনের ৩/৪টি কক্ষ ভাড়া নিয়ে এসব মাদরাসা পরিচালনা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে খাতুনে জান্নাত মহিলা মাদরাসা ও মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদরাসা দুটির পরিচালক মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের জীবন সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য তিনি এ প্রতিষ্ঠান দুটি গড়ে তুলেছেন।
দক্ষিণ ইন্দুরকানী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস. এম লোকমান হোসেন বলেন, করোনা কালে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ৪৫ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন নূরানী ও হাফেজী মাদরাসায় ভর্তি হয়েছে তারা আর ফিরে আসেনি।
আজাহার আলী দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা আব্দুস সালাম বলেন, তাদের ভর্তিকৃত অনেক ছাত্রছাত্রী প্রতিষ্ঠানে আসছে না। তারা তারা নুরানি ও হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়ছে।
ইন্দুরকানী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো: আহসান বলেন, করোনা মহামারীর সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী নূরানী ও হাফেজিয়া মাদরাসায় ভর্তি হবার ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এর প্রভাব পড়েছে।

লেখক খান মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন
সিনিয়র শিক্ষক, আজাহার আলী দাখিল মাদরাসা
ইন্দুরকানী, পিরোজপুর।

 

 

sk24/sma/desk


আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১