ঢামেকে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে’র কাছে জিম্মি রোগী ও স্বজনরা


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় : মার্চ ২৩, ২০২৪, ৪:০৭ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
ঢামেকে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে’র কাছে জিম্মি রোগী ও স্বজনরা
ঢামেকে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে’র কাছে জিম্মি রোগী ও স্বজনরা

 

রাজধানী ঢাকাতে চিকিৎসা নিতে এসে অ্যাম্বুলেন্স বিল মেটাতেই নাভিশ্বাস। অবাক করা তথ্য হচ্ছে, সরকারি হাসপাতলে চিকিৎসায় যে ব্যয় হয়, তার চল্লিশ থেকে ষাট ভাগ দিতে হয় রোগী আনা-নেয়ায়। শক্তিশালী চক্রের সঙ্গে জড়িত হাসপাতালের লোকজনও। হাতে গোনা সরকারি অ্যাম্বুলেন্সও চলে তাদের ইশারায়। আর সব জেনেও নির্বিকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসা সেবায় দীর্ঘ আট দশক ধরে আস্থার নাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। কখনও জীবনের জয়গান, আবার কখনও স্বজনহারার আহাজারি যার নিত্যদিনের সঙ্গী। ন্যূনতম চিকিৎসা ব্যয়ের এই হাসপাতালের পরতে পরতে আছে আশা আর হতাশার দোলাচলও।

আব্দুল জলিল এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা মেডিকেলে আছেন স্ত্রী নিয়ে। দুইদিন বাদে মিলবে ছুটি। যেতে হবে অ্যাম্বুলেন্সে। তবে কিছুতেই মিলছে না ভাড়ার হিসাব। টাকার অভাবে আসার সময় বাসে এসে রোগী নিয়ে পড়তে হয়েছে বাড়তি বিড়ম্বনায়। এবার আর বিকল্প নেই। তার স্ত্রীর রোগ মেরুদণ্ডের হাড় বাঁকা। অপারেশন, স্ক্রু, ওষুধ, থাকা-খাওয়াসহ খরচ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। আর অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া কেবল যেতেই লাগবে ৯ হাজার টাকা। মাসুদ রানার রোগীর মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের চিকিৎসা ব্যয়ের চেয়ে তার আসা-যাওয়ার খরচটাই বেশি। তার রোগ স্ট্রোক। চিকিৎসা, ওষুধসহ খরচ ৮ হাজার টাকা। আর আসা-যাওয়ার খরচ ১২ হাজার টাকা।

প্রায় একই অবস্থা দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা কেন্দ্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীদের। এখানে চিকিৎসা নেয়া দশজন রোগীর তথ্য নেয় সময় সংবাদ। তাতে দেখা গেছে, নিউরো, অর্থোপেডিকের মতো জটিল অপারেশনের পরেও চিকিৎসার যে ব্যয়, তার প্রায় ৬০ ভাগই গুণতে হয় আসা-যাওয়ার খরচে।

এক রোগীর স্বজন বলেন, অপারেশন ও ওষুধসহ ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াই গেছে ১০ হাজার টাকার ওপরে।

এবার রোগী আনা-নেয়ার একমাত্র বাহন অ্যাম্বুলেন্সের দিকে ফেরা যাক। ডিএমসির গেটে সবসময় সরব একটি দল। বলতে গেলে তারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। রোগীর স্বজনরা নামতেই ঘিরে ধরেন তাদের।

যেতে হলে যেতে হবে তাদের গাড়ি নিয়েই বিকল্প আর কোনো উপায় নেই। আবার বাইরে থেকে যেসব গাড়ি রোগী নিয়ে আসে, ফিরতি ট্রিপ ধরা তাদের জন্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ। অর্থাৎ এখানে একটি সিন্ডিকেটে বন্দি সাধারণ মানুষ।

ঢাকা মেডিকেলের পুরানো জরুরি বিভাগের সামনের জায়গাটা বলা যায় পুরোপুরি ঘিরে ফেলেছে অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্স বললেও ভুল হবে। এটা অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের দখলে থাকা কয়েকশ অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল কমপ্লেক্সে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অথচ কয়েক দিন ধরে ঘুরেও সরকারি অ্যাম্বুলেন্স, অর্থাৎ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল লিখা কোনো অ্যাম্বুলেন্স চোখে পড়েনি সময় সংবাদের ক্যামেরায়।

ঢাকা মেডিকেলের পুরো এলাকা পাখির চোখে দেখলে একপাশ যেনো পুরোটাই দখল করে আছে ব্যক্তি মালিকানার অ্যাম্বুলেন্স। অনেক খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে দেখা মেলে সরকারি একটি সাদা বাহনের। জানা গেছে, কাগজে-কলমে আছে ৮টি। এর মধ্যে ২টি পড়ে আছে অযত্নে। ১ টি ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষতি; আর সচল আছে ৫টি।

ঢাকার মধ্যে সাড়ে ৩০০ টাকায় ট্রিপ দেয়ার কথা থাকলেও তা জানেন না বেশির ভাগ সেবাপ্রত্যাশী। সিন্ডিকেটের ভয়ে নির্ধারিত জায়গায় গাড়ি রাখতেই সাহস নেই সরকারি ড্রাইভারদের।

তবে যাদের ঘিরে এত অভিযোগ, বড় গলায় সব নাকচ করে দিল মালিক সমিতি। এদিকে, অনেকটা অসহায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বলছে, আজ ব্যবস্থা নিলে পরের দিন আবার যেই-সেই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যবস্থা নিয়ে চলে আসার পর তারা আবার ওখানে এসে পার্ক করছেন। এই বিশৃঙ্খলাটা আগে আরও বেশি ছিল। এখনও কিছুটা আছে। তবে এটাকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালের নামমাত্র মূল্যে সেবা ম্লান হয়ে যায় আসা-যাওয়ার খরচে। দরকার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে ভাড়া নির্ধারণ। আর সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের পরিধি বাড়ানো।

শুধু ঢাকা মেডিকেলই নয়, এই ধরনের সিন্ডিকেটের দখলে রাজধানীর সবগুলো সরকারি হাসপাতাল।

সুত্র: সময় টিভি


আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০৩১