অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেল অফিস


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রকাশের সময় : মার্চ ২৬, ২০২৪, ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ / Print This Post Print This Post
অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেল অফিস

ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেল অফিসের অর্থলোভী কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কারণে ক্ষুন্ন হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি। ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেলের মাস্টার রোল কর্মচারী শাওন। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ। এসিল্যান্ডের নাম ভাঙ্গিয়ে অসৎ উপায়ে টাকার বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজের কার্যক্রম তিনি সমাধান করে থাকেন এমন গুঞ্জন শোনা যায় এসিল্যান্ড অফিসের আশে পাশে।

সরজমিন অনুসন্ধান দেখা যায়, ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেল অফিসে দালালের আনাগোনা বেশি। তারা যেভাবে পায় সেভাবেই খেতে চায়। ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেল ভূমি অফিসের অনিয়মের চিত্র ইতিপূর্বে কয়েকটি পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে । এসব অনিয়মের কারণে ক্ষুন্ন হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি। তবে অনিয়মের তথ্য নাকি জানা নেই এসিল্যান্ড জালাল সাহেবের।

তবে অভিযোগ রয়েছে, এসিল্যান্ড জালাল উদ্দিন নানান অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার ও নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, সার্ভেয়ার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান (মিজান) গ্রাহকদের সেবা না দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ খান জানান, মিজানের সাথে ঘনিষ্ঠতা বহিরাগত এক দালাল সবুজের সাথে। সবুজ নাকি নিয়ন্ত্রণ করে সার্ভেয়ারকে।
ভূমি অফিসে নিয়ম-শৃঙ্খলা কিছুই নেই। রয়েছে শুধু অনিয়ম দুর্নীতি। চলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মনমতে।

এসিল্যান্ডের সার্ভেয়ার মিজান (৫০), মাস্টার রোল কর্মচারী শাওন (৩০), সহ দালাল চক্র সাব্বির (২৮), সবুজ (২৫), আরিফ( ৩৫), অনিক(২৮), সাইফুল (৩২), মাহাবুব (৩৫), ফরিদ উদ্দিন (২৭), জাকারিয়া (৩৫), চাপাবাজ মামুন (৩৫), আলামিন (৩৮), ফারুক (২৮), অন লাইন (বাবুল) এরা নিয়ন্ত্রণ করছে ভূমি অফিস। এছাড়া তাদের সাথে রয়েছে মহাসিন(৩৪) অফিস পিয়ন।

ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব অফিসে এরকম সিন্ডিকেটধারী, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখেঁকো আগে দেখেনি বলে অভিযোগ উত্তরা, খিলক্ষেত, ক্যান্টনমেন্টের স্থানীয় বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, নির্ভেজাল কাজও ভূমি সহকারী কমিশনার বরাবর না মঞ্জুরের সুপারিশ করে পাঠায় ভূমি অফিসের দু’জন সিনিয়র ব্যক্তি (সার্ভেয়ার ও কানুনগো)। যখন কোনো নামজারি নথি এসিল্যান্ড বরাবর না মঞ্জুরের সুপারিশ করা হয় তখন ভূমি সহকারী কমিশনারের আর কিছুই করার থাকে না। কমিশনারও তখন তাদের তালে তাল মিলিয়ে সাক্ষর করেন। সার্ভেয়ারের ভাষ্যমতে নামজারি ও জমাভাগের কেইসটি না মঞ্জুর করা হলো। এই যদি হয় ভূমি সেবা! মানুষ যাবে কোথায়?

ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেল এসিল্যান্ড অফিসে সেবা নিতে আসা অসহায় ভূমি মালিকদের মুখে মুখে শোনা যায় অত্র অফিসের ঘুষখোর সার্ভেয়ার মিজান ও মাস্টার রোল কর্মচারী শাওনের অপকর্মের কাহিনী।

নামজারি নথি বা কেইস বাতিল করে যেন ভবিষ্যতে কোনো জবাবদিহির মখোমুখি না হতে হয় তারও বহু কৌশল তাদের নিজস্ব ফরমেটে তৈরি করা আছে। একটা নির্ভেজাল কাজে তাদের চাহিদা মতো টাকা না পেলে নামজারি বাতিলের সুপারিশ এমন ‘মূল কাগজপত্র বা দলিল প্রদর্শন না করায় অত্র নামজারি না মঞ্জুর করা যেতে পারে’! অথচ তাদের সিন্ডিকেট বাহিনীর বেলায় এ ধরনের কোনো অযুহাত নেই এবং সারাদিনে দু চারটি মূল দলিল বা মূল কাগজ দেখেছে এরকম নজির খুবই কম। আবার হয়তো কারো কারও নামজারি নথিতে মনগড়াভাবে লিখে রাখে নকশা, পেন্টা লাগবে বিধায় না মঞ্জুরের সুপারিশ! আবেদনকারী নিজে উপস্থিত না থাকায়; না মঞ্জুরের সুপারিশ! অথবা দলিল দাতার/গ্রহিতার বাবার/মায়ের নামের এক অক্ষর ভুল বা এ-কার নাই। আ-কার নাই বা ও-কার নাই, এইসব নিয়েও না মঞ্জুরের সুপারিশ! ওয়ারিশিয়ান সার্টিফিকেট ছয় থেকে এক বছরের পুরোনো হলেই তারা সরকারি নির্দেশনা দেখাবে যে- চলবে না, নিম্নতম তিন মাসের আপডেট লাগবে। সাধারণ পাবলিকের কাজে এরকম আপডেট কাগজ না থাকলেও নামজারি বাতিলের সুপারিশ করা হয়! অথচ, এমনও খারিজ ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে; যার ওয়ারিশিয়ান সার্টিফিকেট একদম জাল, ফুটপাত থেকে বানানো, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং তা কোনো স্থানীয় চেয়ারম্যান বা পৌর মেয়র কর্তৃক প্রদত্ত নয়! শুধু তাই নয়, ২০২৩ সালের নামজারিতে ২০১০ সালের হাতে লেখা সম্পূর্ণ এনালক পদ্ধতির ওয়ারিশিয়ান সার্টিফিকেট লাগিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে খারিজ করে দেওয়ার কূ-কীর্তির অভিযোগ শোনা যায়। সেবাপ্রার্থী লোকজনের মুখ থেকে জানা যায় ‘তারা এখানে আসছে শুধু টাকা কামাতে, এখান থেকে যা পারে কামিয়ে নিয়ে অন্য কোথাও বদলি হয়ে যাবে’। একই কাগজ বা দলিল পর্চা দিয়ে আবেদনকৃত বহু নামজারি কেইস বাতিল হয়েছে শুধুমাত্র নির্ধারিত ঘুষের টাকা না দেওয়ার কারণে। সেই একই কাগজপত্র ও দলিল পর্চা দিয়ে পূনরায় আবেদন করে যথাযথভাবে সার্ভেয়ার। নির্ধারিত ফি পরিশোধে খারিজ ডেলিভারি নেওয়ার নজির আছে শত শত! তাদের সেই নির্ধারিত ফিস গ্রহণের জন্য আছে নিজস্ব জনবল ও গোপন হিসাবের খাতা। সে খাতা এবং নগদ টাকা জমা রাখেন সিন্ডিকেট বাহিনী। ওদের ভিতরে বিশ্বস্ত ক্যাশিয়ার হিসাব রাখে। বহিরাগত যিনি নন অফিসিয়ালম্যান হয়েও বীরের মতো কাজ করছেন।

এসিল্যান্ড অফিসে মাস্টার রোল কর্মচারী সবুজকে চাকরি করা অবস্থায় দুর্নীতির দায়ে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল! সে মিজানের ভাই। এখন এই অফিসেই দালালি করে।

ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেল অফিসে কাজের ধরন বুঝে ঘুষের টাকার অংক নির্ধাারণ করে দেওয়া হয়। ডিসিআর ফি সরকার নির্ধারিত ১১৫০ টাকা বর্তমানে অনলাইনে জমা নিলেও নাজির শাখায় এক্সট্রা ৫০০-৭০০ টাকা জমা দিয়ে তারপর আগত ও চলমান জোত খতিয়ান পোষ্টিং নিতে হয়। নামজারির সর্বশেষ ধাপে এসে উক্ত বর্ণিত নামজারির ফি বাদে এক্সট্রা টাকাটা না দিলে জোত খতিয়ান আর পোষ্টিং দেওয়া হয় না। ফলে অনলাইন থেকে ডিসিআর এর ১১৫০ টাকা জমাদানের যে সরকারি ম্যাসেজ, তা আর গ্রাহকের মোবাইলে আসে না! কয়েকদিন পরে গ্রাহক জানতে পারে, পেন্ডিং জটিলতার কারণে তার নামজারি জমাভাগের প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়েছে! এই সমস্যাটি ক্যান্টনমেন্ট সার্কেল ভূমি অফিসে বর্তমানে মারাত্মক ভয়াবহ ও মহামারীর রুপ ধারণ করেছে! এর সম্পূর্ণ দায়ভার ও দোষ চাপানো হচ্ছে সাধারণ জনগণের কাঁধে। বলা হচ্ছে- সময়মত ডিসিআর ফি জমা না দেওয়ায় অটো বাতিল হয়েছে! অথচ, ডিসিআর ফি জমা দেওয়ার কোনো ম্যাসেজ-ই আসেনি। মূলত অফিসের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে বড় বাবু সাহেব যাকে যেখানে যেভাবে সেটিং করে দিয়েছে, সে সেভাবেই তাদের সিন্ডিকেটের কাজ নিয়ে ব্যস্ত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসিল্যান্ড অফিসটাকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে ৪ জন অফিসিয়ালি স্টাফ।
সার্ভেয়ার মিজান, অনলাইন বাবু, শাওন ও শিপন।

জানা যায় তাদের টেবিলে বিভিন্ন কাজের রেট- বি আর এস খাস দাগ ১৫ হাজার টাকা। এস এ, আর এস ৮নং রেজিস্টার দাগ হলে ১৫ হাজার টাকা, এল এ দাগ ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা,খ তালিকা হলে ৩ থেকে ৫ হজার টাকা, নির্ভেজাল প্রতি কাজের রেট ১ হাজার টাকা!


আর্কাইভ