মহাখালীতে মহিলা ভন্ডপীর ভেনেভি গমেজ আবার সক্রিয়


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৪, ২০২৩, ৭:৪৬ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
মহাখালীতে মহিলা ভন্ডপীর ভেনেভি গমেজ আবার সক্রিয়

রাজধানীর মহাখালীর একমাত্র খ্রিষ্টান ভন্ড পীর হিউবার্ট গমেজ মারা যাওয়ার এক বছরের মাথায় আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে মৃত ভন্ড পীর হিউবার্টের দেহরক্ষিণী জেনেভি গমেজ। সন্ধ্যা হলেই মহাখালী খ্রিষ্টান পাড়ার ১১৫/১৫ বাসায় বসে প্রার্থনার আসর এবং পানি-তেল পড়া ও তাবিজ-কবজের বিক্রয়। স্থানীয় ধর্মপ্রাণ সরলমনা নারীরা রোজ সন্ধ্যায় জেনেভির বাসায় আসেন প্রার্থনা করতে। প্রার্থনা শেষ করে তারা চলে গেলে জেনেভি নিজস্ব মুরিদদের সাথে বৈঠক করে এবং টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয় নতুন মুরিদদের কাছ থেকে। এ পর্যন্ত মুরিদদের দক্ষিণা বাবদ স্বর্ণ ও টাকা পয়সার পরিমান কয়েক কোটি টাকা।

বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বছরে শতাধিক মুরিদ আসে দেশ ও বিদেশ হতে। প্রথমে তাদের বলা হয় তাদের সব স্বর্ণালংকার তার নিকট জমা রাখতে হবে। এর পর চলে টাকা হাতিয়ে নেবার নানা ফন্দি। ভন্ড জেনেভির খপ্পড়ে পড়ে অনেকে নিজের জমি পর্যন্ত দিতে বাধ্য হয়েছে। মঠবাড়ির তপন নামের এক যুবক ভন্ডদের খপ্পরে পড়ে হারাতে বসেছিল কোটি টাকার সম্পত্তি। বিষয়টি তপনের বাবা ও ভাই জানতে পারলে তপনকে মহাখালী জেনেভির বাসা থেকে বাড়ি নিয়ে আসে।

প্রতি বছর বিদেশে মুরিদের এজেন্টের মাধ্যমে আসে কোটি টাকা। ভন্ড জেনেভি কৌশলে এজেন্টদের মাধ্যমে মুরিদ সংগ্রহ করে। নারী হলে প্রথমে ভাগিনী ও তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়লে মেয়ে বানিয়ে প্রথমে সব স্বর্ণ এবং পরে মাসে মাসে টাকা দাবি করে। ধর্মের বয়ানের সাথে ওই মুরিদ নারীকে স্বামীর নামে বদনাম করে স্বামী থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরিয়ে দেয়। এবং বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়। আবার টাকা দাবি করে বলে, ‘যদি ১০ লক্ষ টাকা দাও তাহলে তোমাদের সম্পর্ক জোড়া লাগিয়ে দিবে।’ এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা সংগ্রহে সহায়তা করতো প্যাট্রিক, টনি ও কালাম ওরফে জেসি। কিন্তু ইতোমধ্যে যারা সংসার হারিয়েছে তারা নিরুপায় হয়ে টাকা জমা রাখে জেনেভির কাছে।

২০২০ সালে আমেরিকা প্রবাসী এক সন্তানের জননীকে ফুসলিয়ে দেশে নিয়ে কথিত পালক সন্তান প্যাট্রিকের সাথে স্বামী থাকা অবস্থায় বিয়ে দেয় মহাখালীর এক নেতার উপস্থিতিতে। মিডিয়াতে এ নিয়ে হৈচৈ পড়লে মন্ডলীর টনক নড়ে। তৎকালীন ঢাকার আর্চ বিশপ ও সহকারী বিশপ প্রতি প্যারিসে ঘোষণা করেন যেন কোনো খ্রীষ্টভক্ত ভন্ড পীরের বাসায় না যায়। যার কারণে এক বছর ভন্ডদের কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
পুলিশ এবং সাংবাদিকদের ভয়ে এক মাস পালিয়ে থাকার পর ওই নারী আমেরিকা ফিরে আসলেও পরিবারে ফিরে আসেনি। এমনি একমাত্র কন্যার কোন খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি তিন বছরে। কারণ জেনেভির নির্দেশ ছিল যেন ওই নারীর পিতা-ভাই-স্বামীর সাথে যোগাযোগ করলে তারা তাকে মেরে ফেলবে।

এই জেনেভার অভিশাপের থাবায় উত্তর বঙ্গের প্রতিষ্ঠির এক কবি নিজের স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল। এখনো কবি সন্তানকে না দেখার কষ্ট বুকে বয়ে বেড়াচ্ছেন। সন্তান চাইলেও বাবাকে দেখতে দিচ্ছেন না কবির প্রথম স্ত্রী।

বক্সনগরের ভন্ড জেনেভি এক সময় হিউবার্টের মুরিদ ছিল। অবিবাহিত থাকায় হিউবার্টের নজর পড়ে জেনেভির দিকে। এ নিয়ে গোল্লা গ্রামে কয়েকবার শালিস হলেও অপকর্ম চালিয়ে যায় দুজন। গ্রামবাসী এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে দু’জনকে পিটিয়ে গ্রামের বাইরে বের করে দিলে দুজন স্বামী-স্ত্রীর মত আস্তানা গড়েন মহাখালীর শিলা হাউজে। হিউবার্টের আগের স্ত্রীর ঘরে চার সন্তান। সবাই এখন প্রতিষ্ঠিত। তাদের ছেড়ে মহাখালীতে আবার ধর্মের নামে ঝাড়ফু, তেল পড়া, পানি পড়ার বিনিময়ে সম্পদের পাহাড় গড়তে শুরু করলে শিলা হাউজ থেকে তাদের বের করে দেয়া হয়। এ সময় দুইজন আশ্রয় নেয় মহাখালীর এক মুরিদের বাসায়। এবং ধর্মের ব্যবসার মাধ্যমে কিনে নেয় দুটি ফ্ল্যাট।

ভন্ড হিউবার্ট চট্টগ্রাম থাকে প্যাট্রিক গোমেজ নামের এক যুবককে তাবিজের মাধ্যমে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করে। এই সময় জেনেভি কোন এক এতিমখানা থেকে টাকার বিনিময়ে ক্রয় করে কালাম নামের এক শিশুকে পরে যার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জেসি। একই সময় হিউবার্ট রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লী থেকে টনি নামের এক যুবককে মন্ত্রে দীক্ষিত করে মহাখালীতে নিয়ে আসে। টনি বিয়ে করেছে ও ঘরে এক সন্তান রয়েছে। টনি ও প্যাট্রিক মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে ভন্ডপীরকে টাকা পাঠাত। এক সময় টাকার হিসেবে নিয়ে গরমিল দেখা টনি ও প্যাট্রিক দেশে চলে আসে। প্যাট্রিকের প্রধান কাজ হলো মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুরিদ বানিয়ে নেটে নোংড়া ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করা। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে এক মুসলিম মেয়ে, পাবনা থেকে এক মেয়ে, ভাসানিয়া গ্রামের এক মেয়ে এবং সব শেষে আমেরিকা আসার জন্য এক সন্তানের জননীকে(৪৩) ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করে। শেষের নারী এঞ্জেলার অপকর্মের কারণে আজ তার বাবা অসুস্থ হয়ে বিলাপ করছে।

এই ভন্ডপীরের পরিবারকে ক্যাথলিক মন্ডলী থেকে বিতাড়িত করলেও মহাখালীর এক নেতার সহায়তায় তারা আবার নিয়মিত চার্চে গিয়ে কমনিয়ন নিচ্ছে। এ নিয়ে মহাখালীর খ্রিষ্টান কমিউনিটিতে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও ওই নেতার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করছে না। গত বছর ঢাকা ধর্মপ্রদেশীয় পালকীয় কর্মশালায় ভন্ড জেনেভির পক্ষে সাফাই গায় ওই নেতা।

মহাখালী খ্রিষ্টান পাড়ার ১১৫/১৫ বাসায় ভন্ড জেনেভি ৭ জনকে নিয়ে দুই রুমে বাস করছে। এক রুমে মা মারিয়ার মূর্তিতে ভরা। যা কেবল লোক দেখানো। অল্টারের নিচে লুকিয়ে রেখেছে কোটি টাকার মুরিদদের স্বর্ণালংকার। অবৈধ টাকা দিয়ে কিনেছেন জমি ও ফ্ল্যাট। গত বছর ডেভেলপার কোম্পানির কাছে একটি জমি বিক্রি করেছে কয়েক কোটি টাকায়। শোনা যাচ্ছে টাকার ভাট- ভাটোয়ারা নিয়ে প্যাট্রিকের সাথে দ্বন্দ্ব চলছে। ইতোমধ্যে ভন্ডের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভুক্তভোগীরা।

মহাখালী খ্রিষ্টান পাড়ায় এমন কুকর্মের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না মহাখালীর পাল-পুরোহিত ও আর্চবিশপ। ভোক্তভোগীরা দাবি করেন যেন মন্ডলী থেকে তাদের বিতাড়িত এবং পীরের কর্মকান্ড বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিবে।


আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১