অবহেলা করলেই বিপদ মানসিক রোগের এই ৫ লক্ষণ


লাইফস্টাইল ডেস্ক প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ / Print This Post Print This Post
অবহেলা করলেই বিপদ মানসিক রোগের এই ৫ লক্ষণ

সিজোফ্রেনিয়া মূলত একটি গুরুতর মানসিক ব্যাধি। এই রোগের ৫টি সাধারণ উপসর্গ আছে। যার মধ্যে প্রথম তিনটি উপসর্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত কি না তা বুঝতে হলে প্রথমেই এর গুরুতর লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। যেমন-

ডিলিউসন

ডিলিউসন হচ্ছে এক প্রকার মিথ্যা বিশ্বাস যার বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই। যেমন- কেউ এমন বিশ্বাস করে যে নিজে প্রধানমন্ত্রী কিংবা কোনো নায়িকা কিংবা কোনো হিরো তাকে ফলো করে। একে পারসিকিউটরি ডিলিউশন বলে।

কিংবা সে বিশ্বাস করে তার চিন্তা অন্যজন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। একে বলে ডিলিউশন অব কন্ট্রোল যেমন- কেউ বিশ্বাস করে রাতে তার কাছে এমন কেউ আসেন, যিনি সব সে ঠিক করে দেন।

অর্থাৎ তার চিন্তাভাবনায় একটি মিথ্যা বিশ্বাস তৈরি হয়, যা তার নিজের কিংবা অন্যের সম্পর্কে বা সোসাইটি কিংবা পরিবারের কারো ব্যাপারে ভুল বিশ্বাস তৈরি করে।

এছাড়া ডিলিউশন অব গ্রান্ডিউস এ যারা ভোগেন তারা নিজেকে দেশের একজন বিশেষ মানুষ বলে বিশ্বাস করেন। সবাই তার ভক্ত সে নিজকে নেতা হিসেবে বা আইডল হিসেবে বিশ্বাস করে।

তার বিশ্বাস থাকে, কেউ এসে তাকে লন্ডন নিয়ে যাবেন, তার জন্য বিমান পাঠাবেন কিংবা অন্য দেশের কেউ তার প্রতিটি পদক্ষেপ ফলো করে ইত্যাদি।

হ্যালুসিনেশন

এক্ষেত্রে তার মধ্যে অস্বাভাবিক সেন্স কিংবা উপলব্ধি তৈরি হবে। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন- সে নিজের কানে অনেক কিছু শুনতে পাবে, অথচ বাস্তবে কেউ কথা বলছে না। আবার সে গায়েবি আওয়াজ শুনতে পাবে, এসব শব্দে হয়তো সে সাড়াও দিবে কিন্তু যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।

ডিসঅরিয়েন্টেড স্পিচ

এক্ষেত্রে রোগী তার স্বাভাবিক কথাবার্তা বলার ধরন হারিয়ে ফেলবে। কখন কাকে কি বলতে হবে তা বুঝবে না। এক বিষয় থেকে কথা অন্য বিষয়ে নিয়ে যাবে। এই ধরুন, তিনি ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করেন অথচ বন্ধুদের কিংবা অন্যদের বলে বেড়াচ্ছেন ১০ তলা বাড়ি বানাবেন। অমুক নায়িকাকে বিয়ে করবেন ইত্যাদি।

সিজোফ্রেনিয়ার রোগীদের মধ্যে এই লক্ষণগুলোর কোনো একটি হলেও দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণগুলো সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে প্রাথমিক অবস্থা থেকে শুরু করে গুরুতর অবস্থা পর্যন্ত দেখা দেয়। এর পাশাপাশি আরও কয়েকটি লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন-

অসংলগ্ন বা আক্রমণাত্মক আচরণ

নিজের সঙ্গে কিংবা অন্যের সঙ্গে এমনটি পরিবেশের উপরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এই রোগীরা। কেউ হয়তো নিজেকে আঘাত করেন আবার কেউ হয়তো অন্যকে আঘাত করেন।

এছাড়া কেউ কেউ গাছপালা কাটেন, ঘরের জিনিসপত্র ভাঙেন। আবার অনেকে আছেন যারা আক্রমণাত্মক না হলেও স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ করেন না।

যেমন- ধরুন খাবার খেতে বসেছে। কিছু নিজে খাচ্ছেন, কিছু এক জায়গায় রেখে দিচ্ছেন আর বলছে এইগুলো অমুকের জন্য বা এইগুলো জ্বিনের জন্য ইত্যাদি।

নেগেটিভ আচরণ

রোগীর মধ্যে নেগেটিভ উপসর্গ তৈরি হয়। উদাহরণস্বরুপ, সে কোনো আবেগ দেখাতে পারবে না, তার মধ্যে আবেগ অনুভতি, আনন্দ প্রকাশ, এই বিষয়গুলো হারিয়ে যাবে। ধরুন, তার কোনো আত্মীয় মারা গেলন অথচ এ বিষয়টি তার মাঝে প্রভাব বিস্তার করবে না, এমনকি তাকে ব্যথিতও করবে না।

অথবা একটা সুখের কিংবা ভালো খবর শুনলে অন্যরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তার মধ্যে সেটিও থাকবে না। এসবের পাশাপাশি ঘুম কমে যাবে, সব কিছুতে ইন্টারেস্ট কমে যাবে, সেক্সুয়াল পাওয়ার কমে যাবে, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা পছন্দ করবে। কিংবা নীরব স্বাভাবিক শান্ত হয়ে বসে থাকবে ও কথাবার্তা কমিয়ে দিবে।

এই উপসর্গসমূহ দেখা দেওয়ার পর অনেকে বুঝতে পারেন যে তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। অনেকে নিজ থেকে চিকিৎসাও নেন। যদি সে নিজের সমস্যা বুঝতে পারে, তাহলে তাকে নিউরোসিস বলা হয়। তার চিকিৎসার ফলাফল দ্রুত পাওয়া যায়।

আবার অনেকেই আছেন যারা নিজেদের সমস্যা বুঝতে পারেন না। কেউ যদি তাকে বুঝাতে চায়, সে আরও রেগে ওঠে। এটাকে বলে সাইকোসিস। অর্থাৎ নিজের মানসিক সমস্যা হচ্ছে দেখেও যে তা বিশ্বাস করেন না তারা, কিংবা বুঝতে পারেন না।

সিজোফ্রেনিয়া বয়স সন্ধিকালের পর যে কোনো বয়সেই হতে পারে। স্টুডেন্টদেরও হতে পারে। আপনার পরিবারের অন্য কারো না থাকলেও এটা হতে পারে।

আপনার সুস্থ মেধাবী সন্তানের কিংবা বন্ধু-বান্ধবীর এমন সমস্যা যদি আপনি বুঝতে পারেন, তাহলে তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা না করে তাকে সময় দিন ও তার সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন। তাকে সাপোর্ট দিন যেন সে পূর্ণাঙ্গ পাগল না হয়ে যায়। আপনার সাপোর্ট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক ভার্সিটিতে পড়ুয়া মেধাবী ছেলে মেয়েও সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন, তবে তারা নিজেদের সমস্যা বুঝতে পারে। অন্যরা পাগল ভাববে বলে শেয়ার করে না তবুও মাঝে মধ্যে কিছুটা তারা শেয়ার করে।

যখন দেখবেন আপনার আশপাশের আপন কেউ হঠাৎ নীরব হয়ে গেছেন কিংবা হঠাৎ তার আচরণগত পরিবর্তন ঘটেছে তাহলে তাকে একটু সাপোর্ট দিন। বাবা-মায়েরও উচিত সন্তানকে ভালোবেসে এসব বিষয়ে জানা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

যত দ্রুত সম্ভব তাকে একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। দেখবেন ৬ মাসের মধ্যেই সে আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে। অন্যথায় পূর্ণাঙ্গ মানসিক রোগী কিংবা আত্মহত্যার দিকে চলে যেতে পারে।

SK24/SMK/DESK


আর্কাইভ