বস্তিতে আগুন এবং কিছু বাস্তব সত্য কথা


সময় ডেস্ক প্রকাশের সময় : মার্চ ২৭, ২০২৪, ৭:৪৯ অপরাহ্ণ / Print This Post Print This Post
বস্তিতে আগুন এবং কিছু বাস্তব সত্য কথা

 

একটা কঠিন বিষয় নজড়ে এসেছে। সম্প্রতি আগুন লাগার পূর্বে রাজধানীর বনানী গোডাউন বস্তিতে যারা ভাড়াটিয়া ছিলেন, পুড়ে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে অনেকে এখন নিজেরা ঘর তুলে বাড়িওয়ালা বনতে চাচ্ছেন। এনিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া এক পক্ষ সুযোগে নতুন করে জায়গা দখল করে ঘর তোলার চেষ্টা করছেন। নতুন করে ঝিল ভরাট করে বস্তি বড় করার পাঁয়তারাও হচ্ছে। চলছে ক্ষমতার বলে টিকে থাকার লড়াই! মানবিকতাকে পুঁজি করে সেখানে মারাত্মক পলিটিক্স চলছে।

সরেজমিনে পোড়া বস্তিতে গিয়ে অনেকের হাস্যজ্জল মূহুর্ত দেখে মনে হয়েছে তারা দিব্যি ভালো আছে। বিভিন্ন সংস্থা থেকে খাবার পাচ্ছে, নগদ অনুদান ও সাহায্য পাচ্ছেন। আর এসব পেতেই মিডিয়ার সামনে যেন সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার অভিনয় করছেন। অভিনয় একারনেই বলছি যে, বস্তির অনেকের বক্তব্য মিডিয়ায় দেখেছি। পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকার সুবাদে অনেককেই চিনি। তাদের আর্থিক অবস্থানও জানা। কয়েকজন হিজড়ার বক্তব্য দেখেছি যারা কিনা পুরো বনানী-মহাখালীর হিজড়াদের সর্দার এবং হিজড়াদের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক। এছাড়া যারা বস্তিতে থাকেন তারা এধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অভ্যস্ত। কিভাবে পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় তাদের সেই কৌশল জানা।

নিজে দেখেছি, অগ্নিকাণ্ডের সময় অধিকাংশ ঘরের মানুষ টিভি, ফ্রিজসহ দামি দামি আসবাবপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে এসেছেন। এসব আসবাবপত্র দেখে বস্তির মানুষকে গরিব ভাবার কোন উপায় নেই। অনেকে আবার একাই ১০ থেকে ২০টি ঘরের মালিক। মাসে লাখ টাকা ভাড়া তোলেন। হ্যা, হাতে গোনা কয়েকজন নিঃস্ব হয়েছে কিন্তু অনুদানের সুবিধা ভোগ করবে সবাই। ঘরের মালিকদের সামর্থ্য আছে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার। অথচ তারা তা করবে না, উল্টো অনুদানের টাকা সবার আগে বুঝে নেয়। যারা এসব অনুদানের টাকা বিলিয়ে দেয় তাদেরকে তারা সেভাবেই ম্যানেজ করে।

আমার কথা গুলো অনেকের ভালো না লাগতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি বাস্তব সত্যিগুলোই তুলে ধরলাম। তার প্রমাণ হলো- এর আগে গোডাউন বস্তির পাশের বেদে বস্তিতে আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়েছিল কিন্তু এখন গিয়ে দেখুন সেই বস্তি এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নত। সেখানে সব এখন দোতলা ঘর। বস্তিতে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ! বস্তিতে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নেওয়া হয় প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে, অসতর্কতায় বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবুও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে অনেকে সরকার ও ফায়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা নিয়ে দোষারোপ করে যে, ‘ফায়ার সার্ভিস দেরিতে আসে, ফায়ার সার্ভিস সঠিক ভাবে অগ্নিনির্বাপণ করতে পারে না’। অগ্নিদূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

গোডাউন বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বস্তিবাসীর অনেকে বিভিন্ন মিডিয়ায় কাছে সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছে, বস্তির গ্যাস সংযোগের পাইপ গুলো অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ তবুও যারা ভাড়া তোলে তারা মেরামত করে না। এসবের বিরুদ্ধে যদি সংশ্লিষ্ট সংস্থা গুলো অভিযান পরিচালনা করে তখন আবার অনেকে নারাজ হোন। অমুক নেতা, তমুক নেতা অভিযান বন্ধ করতে সুপারিশ করেন। এটাই আমাদের দেশের বাস্তবতা!

হাবিব সরকার
শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ।


আর্কাইভ