স্বাধীনতার ৫২ বছরে প্রিয় স্বদেশ


এবি নাছিম প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৬, ২০২৩, ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ / Print This Post Print This Post
স্বাধীনতার ৫২ বছরে প্রিয় স্বদেশ

 

আজ মহান বিজয় দিবস। বাঙালির হাজার বছরের গৌরব, বীরত্ব ও আত্মদানে মহিমান্বিত অর্জনের দিন ১৬ই ডিসেম্বর । বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের দিন। মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন ভূখণ্ডের জানান দেওয়ার দিন।

বীর বাঙালি ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। আজকের এই দিনে ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অবনত মস্তকে অস্ত্র নামিয়ে গ্লানিময় আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল।

দেশে দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিনের প্রথম প্রহরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ।

মহান মুক্তিযু্দ্ধের যেভাবে সূচনা হয়: পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির প্রতিরোধ শুরু হয় ১৯৪৮ সাল থেকে। এরপর ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান যেন একেক স্ফুলিঙ্গ ছড়াতে থাকে। এরপর ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করার পরও ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত নিরীহ নিরস্ত্র সাধারণ বাঙালিদের ওপর চালায় মানব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে হানাদারদের প্রতিরোধের আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হন এ লড়াইয়ে। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। মুক্তিবাহিনীর কাছে মাথা নত করে পাকিস্তানি ঘাতক দল। পৃথিবীর বুকে অর্ধশত বছর আগের এই দিনে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। বাঙালি ঊর্ধ্বলোকে তুলে ধরে প্রাণপ্রিয় লাল-সবুজ পতাকা।

মুক্তিযুদ্ধে মূল প্রত্যাশা: বৈষম্য ও শোষণহীন একটি স্বাধীন দেশ। যেখানে সবার গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার থাকবে। একই সঙ্গে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। এই চার নীতির ওপর ভিত্তি করেই ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণীত হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫২ বছরে প্রত্যাশার পাওয়া না পাওয়ার প্রশ্ন রয়েই গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চার নীতি থেকে অনেক দূরে বাংলাদেশ। এটার কারণ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের দোসররা ক্ষমতায় ছিল। তারা এসব নীতি থেকে সরে যাওয়া শুরু করে; যা আজও চলছে। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের ভূমিকা রয়েছে। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নির্বাচন অপরিহার্য । এই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াই হবে রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা দিক নিয়ে এখন কাজ হওয়া প্রয়োজন। তথ্য প্রবাহের সুযোগ যেমন তরুণরা ব্যবহার করতে পারেন, তেমনি সাংবাদিকদের দায়িত্ব আছে মুক্তিযুদ্ধকে গুরুত্ব দিয়ে ভিন্নধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করা।

সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধা: মহান বিজয় দিবসের সূচনা লগ্নে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ লাখো জনতা। এসময় ফুলে-ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতিসৌধের মূল শহীদ বেদী। শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, বিদেশি কূটনৈতিকবৃন্দ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষ।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে-সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এসময় তাদেরকে দেওয়া হবে তিন বাহিনীর গার্ড অব অনার। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদনের পরপরই স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে। মহান বিজয় দিবসকে স্বাগত জানাতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

আজ সরকারি ছুটি। রাজধানীর পাড়া-মহল্লা, সড়কের মোড়ে মোড়ে বাজবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আর মুক্তির অবিস্মরণীয় গান। বাড়ির ছাদের কার্নিশে, অফিস-আদালত, দোকানপাটে, অনেক যানবাহনে উড়বে লাল-সবুজ পতাকা। ইতোমধ্যে আলোকসজ্জা করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও সড়কে।


আর্কাইভ