ডায়রিয়ায় একজনের মৃত্যু

হাসপাতালের মেঝেও ভরে গেছে ডায়রিয়া রোগীতে


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ / Print This Post Print This Post
হাসপাতালের মেঝেও ভরে গেছে ডায়রিয়া রোগীতে

 

পটুয়াখালীর বাউফলে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে ডায়রিয়া রোগী সংখ্যা। ধারন ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন বেশি রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে বেড সংকট থাকায় বাধ্য হয়ে মেঝে ঠাঁই নিয়েছেন রোগীরা। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

গতকাল (সোমবার) রাতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ওই শিশুর রিনা (৭) নাম । সে উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামের রহিম গাজীর মেয়ে। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. মিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শিশুটি তিন দিন আগে ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়। পরিবারের লোকজন হাসপাতালে না এনে বাড়িতে রাখেন। গতকাল রাতে তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। যথাসময় চিকিৎসা পেলে শিশুটির প্রাণ বাঁচানো যেত।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসাব বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। গত এক মাসে ৩৮৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত ৭দিনে ভর্তি হয়েছেন ৯৬জন। আর সর্বশেষ ২৪ঘন্টায় ১৫জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর হাসপাতালের বর্হিবিভাগ ও জরুরি বিভাগ থেকে গত ৭দিনে দেড় শতাধিক রোগির চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য পাওয়া গছে। এসব রোগীর প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু ও বয়স্ক।


তবে উপজেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও তিনগুন বেশি বলে দাবি করেছেন একাধিক চিকিৎসক। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, হাসপাতালে বেড সংকট থাকায় অনেক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসছেন না। তারা স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও বিভিন্ন চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। যার সংখ্যা হাজারের অধিক।

মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় শিশু, নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে বেড খালি না থাকায় মেঝেতে অনেকেই বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। মেঝেতেও জায়গা না হওয়ায় এক শিশু সন্তানকে স্যালাইন দেওয়া অবস্থায় নারী দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ থেকে আসার মরিয়ম বেগম (২৬) নামে ওই নারী জানান, সোমবার থেকে তার আড়াই বছরের শিশু সন্তান বার বার পাতলা পায়খানা করছেন। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক তার সন্তানকে স্যালইন দেন। তবে হাসপাতালে জায়গা না থাকায় সন্তান নিয়ে দাড়িয়ে আছেন।

মেঝের নোংরা – অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে গাদাগাদি করে অবস্থান নিতে হয়েছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। তীব্র গরমে ফ্যান না থাকায় হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন রোগীর স্বজনেরা। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা।

সমীর শীল নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, কোনো বেড থালি না থাকায় মেঝেতেই বিছানা পেতে অবস্থান নিয়েছেন তারা। তবে মেঝের চারপাশে নোংরা পরিবেশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করছেন। এতে একদিকে দুগর্ন্ধ অন্য তীব্র গরমে রোগীর অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

হঠাৎ করে উপজেলা জুড়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াও ডায়রিয়া স্যালাইনের সংকটও দেখা দিয়েছে। সরকারি হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় কম স্যালাইন সরবরাহ থাকায় বাহির থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে রোগীদের। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চড়া দামে স্যালাইন বিক্রি অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোগীর স্বজনরা বলছেন, হাসপাতাল থেকে ১ / ২ স্যালাইন দেওয়া হয়। বাকি স্যালাইন বাহির থেকে কিনতে হয়। এতে স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফামের্সী ব্যবসায়ীরা ১শ টাকার স্যালাইন ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।

এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন,‘ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সরবরাহ না থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ২০০ ব্যাগ স্যালাইন দিয়েছি। তা দিয়েই চিকিৎসা চলছে। আরও ২০০ ব্যাগ অর্ডার দিয়েছে। সংকটের কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা সংকট সমাধনে ব্যবস্থা নিবেন।


আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০